ডিসিসিআইয়ের ওয়েবিনারে বক্তারা

তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে এখনই কার্যকর রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। দক্ষতা উন্নয়নে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্প খাতের সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তারা। গতকাল ‘নতুন কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা: প্রেক্ষিত ভবিষ্যৎ ব্যবসা-বাণিজ্য’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা, ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী, ইউনিডোর আবাসিক প্রতিনিধি জাকি উজ জামান ও আইএলও’র আবাসিক প্রতিনিধি তুমো পুটিয়ানেন।

ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এনকেএ মবিনের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্যে দেন ডিসিসিআই’র সভাপতি শামস মাহমুদ। ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রথম থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সরকার স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার ফলে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থিতিশীলতার সঙ্গে অগ্রসরমাণ হচ্ছে।

বৈশ্বিক প্রযুক্তি বিপ্লবকে মেনে নিয়ে এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা না গেলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেকসই করা সম্ভব নয়। তিনি কর্মরত জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রবাসী শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও জোরারোপ করেন।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বেসরকারি খাত এবং এনজিগুলোকে একযোগে করার আহ্বান জানান।

ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষ জনবল তৈরিতে যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এ অবস্থা উত্তরণে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারকে একযোগ কাজ করতে হবে।

ইউনিডোর আবাসিক প্রতিনিধি জাকি উজ জামান বলেন, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করা সম্ভব হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক ব্লক-চেইন খাতে তরুণদের নিজস্ব জায়গা করে নিতে আরও উদ্ভাবনী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আইএলও’র আবাসিক প্রতিনিধি তুমো পুটিয়ানেন বলেন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, শ্রমবাজারের নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনের নিরিখে শ্রম খাতের আধুনিকায়ন জরুরি। তিনি সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় বাড়ানো এবং বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার যুগোপযোগীকরণের ওপর জোরারোপ করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই’র সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, জনসংখ্যার আধিক্য থাকলেও বাংলাদেশের শিল্প খাতে দক্ষ লোকবলের প্রচুর অভাব রয়েছে এবং আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২ দশমিক তিন শতাংশ বেকার। তিনি বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ফলে দক্ষতা ও বৈশ্বিক শ্রমবাজারের গতি-প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রথাগত দক্ষতার পাশাপাশি নতুন পরিস্থিতি ও বাজার ব্যবস্থাপনা চাহিদার ভিত্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং এর যথাযথ বাস্তাবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের কর্মরত মোট জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশকে পুনর্দক্ষ করে তুলতে হবে। চেম্বার সভাপতি শিল্প খাতের প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের শিক্ষা কারিকুলাম যুগোপযোগীকরণের প্রস্তাব করেন এবং এ লক্ষ্যে শিল্প ও শিক্ষা খাতের সমন্বয় আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

মূল বক্তব্যে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিবছর দুই দশমিক দুই মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হয়, যা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। তিনি জানান, কভিড-১৯-এর কারণে আঙ্কটাডের মতে, ২০২০ বৈশ্বিক বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে এবং বৈশ্বিক এসএমই উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশ অস্তিত্ব রক্ষা হুমকির মুখে পড়বে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় তিন দশমিক এক মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে, তবে এজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন একান্ত আবশ্যক।

তিনি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও দক্ষতা উন্নয়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো, শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কার, দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, দক্ষতা উন্নয়নে সরকারি প্রণোদনা প্রদান এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের প্রস্তাব করেন।

নির্ধারিত আলোচনায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী ও প্রধান নির্বাহী রাহাত আহামদ এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ম্যারিয়্যান ওহলার্স অংশগ্রহণ করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০