নরসিংদীতে বাড়ছে অনাবাদি কৃষিজমি

প্রতিনিধি, নরসিংদী: নরসিংদীতে প্রতি বছরই বাড়ছে অনাবাদি কৃষিজমি। খরচের তুলনায় লাভের পরিমাণ কম হওয়ায় কৃষক কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। এর সঙ্গে আরও কিছু কারণে তরা ফসলি জমি অনাবাদি ফেলে রাখছে। এ জেলায় এসব পতিত জমির পরিমাণ শত শত হেক্টর। কৃষিকাজ না থাকায় বাধ্য হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এখানকার অনেক কৃষক সন্তান।

সরেজমিন নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে ১৬০০ হেক্টরেরও বেশি কৃষিজমি। এসব জমিতে ধান, মরিচ, আলু, বাদাম, তিল, ভুট্টা, বাঙ্গি, উস্তে, মিষ্টি কুমড়োসহ বিভিন্ন ফসলের ভালো ফলন হয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। কিন্তু সার, কীটনাশক ও জ্বালানি তেলসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণ। ফলে লাভ কম হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষক এখন ফসল আবাদ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ কারণে শুধু চরাঞ্চলেই পতিত পড়ে রয়েছে প্রায় আড়াইশ হেক্টর কৃষিজমি।

এছাড়া কৃষিকাজ ছেড়ে কৃষকের সন্তানদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে কৃষিকাজের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষিশ্রমিকদের পাওয়া গেলেও মজুরি দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ।

এভাবে বাঁশগাড়ী, চরআড়ালিয়া, করিমপুর, আলোকবালী, চাঁনপুর, পাড়াতলী, মির্জারচর, চরদীঘলদি, নজরপুর, শ্রীনগর ও চরমধুয়ার মতো জেলার ১১ চরাঞ্চলীয় ইউনিয়নে প্রতি বছর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অনাবাদি জমির পরিমাণ।

রায়পুরা উপজেলার বাখরনগর গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, এ এলাকার ছেলেরা একটু শিক্ষিত হলেই চলে যায় বিদেশে। ফলে কৃষিজমিতে কাজ করার মতো লোক পাওয়া যায় না। এভাবে একজনের দেখাদেখি আশেপাশের কৃষকের সন্তানরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ফলে কৃষিজমিতে এখন গরু চরানো ছাড়া আর কিছু করার নেই।

সদর উপজেলার আমদিয়া গ্রামের আহাম্মদ মিয়া জানান, জ্বালানি তেল, সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম বেশি হওয়ার কারণে এবং সময়মতো শ্রমিক না পাওয়ায় জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। ফলে শত শত বিঘা জমি পতিত হয়ে যাচ্ছে।

একই এলাকার অপর কৃষক আলী হোসেন জানান, এখানে সম্প্রতি আবাসিক ব্যবসার নামে এক শ্রেণির জমি ব্যবসায়ীর আবির্ভাবের ফলে পানির পাম্পগুলো কৌশলে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে এখানকার কয়েকশ একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে।

নানা কারণে কৃষকের ফসল আবাদ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন নরসিংদী সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হাই। তিনি জানান, জমি যাতে পতিত পড়ে না থাকে, সে লক্ষ্যে বিকল্প পদ্ধতির লাভজনক ফসল চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া সহজ শর্তে কৃষকের ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তারা চাষাবাদে আগ্রহী হবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০