নিজস্ব প্রতিবেদক: বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র অকার্যকর ছিল। পাশাপাশি ভবনটিতে যে একটি ইমারজেন্সি এক্সিট বা জরুরি বহির্গমন যে পথ আছে সেটিও বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দলের আহ্বায়ক অরুণ শিকদার।
গতকাল সকালে বনানীর এফআর টাওয়ার পরিদর্শনে আসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দল। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিস থেকে গঠিত তদন্ত দলকে সঙ্গে নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন তারা।
ভবনে প্রাথমিক পরিদর্শন এবং তদন্ত করে বেরিয়ে এসে অরুণ শিকদার বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে আরও সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা যেটুকু দেখেছি তার সারমর্ম হচ্ছে, ভবনে থাকা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র অকার্যকর ছিল। আর একটি ইমারজেন্সি এক্সিট আমরা দেখেছি। তবে সেটি বন্ধ ছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে, সবাই মিলে একটি বৈঠকে বসবেন। বৈঠক থেকে একটি উপসংহারে আসা হবে। এছাড়াও বুয়েট তদন্ত দলের প্রতিবেদন সাপেক্ষে ভবন খুলে দেওয়ার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে তদন্ত দল।
এছাড়া এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ফ্লোরে যারা ছিলেন আজ রোববার তাদের বক্তব্য শুনবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দল।
উল্লেখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটিতে থাকা বুয়েট, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও আর্মড ফোর্সেসের প্রতিনিধিসহ ৯ সদস্য এফআর টাওয়ারে ঢোকেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২৩ তলা সুউচ্চ ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডে শেষ খবর পর্যন্ত ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেখেছি ভবনের ৮, ৯ ও ১০ তলায় আগুন লেগেছিল। তবে কীভাবে লেগেছে, ঠিক কোন জায়গা থেকে লেগেছে, তা এখনও বলতে পারছি না। আমরা যেসব ফ্লোরে গিয়েছি (৮, ৯, ১০), সেখানে দেখেছি দেয়ালের ফায়ার হাইড্রেন্ট অকার্যকর ছিল। ২৩ তলা এ ভবনটির এসব তলায় যারা ছিলেন, রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের কথা শুনবেন বলে জানান তিনি।
আগামী ৩ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশা প্রকাশ করে ফয়জুর বলেন, ‘আগুনের কারণ কী ও এসব ঘটনা থেকে উত্তরণের উপায় কী, এসব বিষয় প্রতিবেদনে থাকবে।’
গতকাল বনানীতে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে বাড্ডা জোনের এডিসি আহমেদ হুমায়ূন বলেন, ব্যবসায়ীরা শুক্রবার পণ্য সরিয়ে নেওয়ার পর ভবনটিতে এখন আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি তলা পুলিশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আগুন লাগার পর থেকে এফআর টাওয়ারের সামনের কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের একটি অংশে যান চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। পেছনের ১৭ নম্বর সড়কেও যান চলাচল বন্ধ। কর্তৃপক্ষ ভবনের পরিস্থিতি জানানোর পর পুলিশ সড়ক খুলে দেবে বলে জানান এডিসি হুমায়ূন।
এদিকে, রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আবু হেনা মোস্তফা কামাল (৪১)। এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬ জনে। নিহত আবু হেনা মোস্তফা কামাল দুর্ঘটনাকবলিত এফআর টাওয়ারের ১১ তলার একটি অফিসে কর্মরত ছিলেন।
গতকাল বনানীতে ক্ষতিগ্রস্ত এফআর টাওয়ারের আশেপাশের এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, আশেপাশের ভবনগুলোতে গতকাল আড়াইটার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এফআর টাওয়ার সংলগ্ন দুটি ভবনে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। ভবনগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় সেখানের বিভিন্ন অফিসের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহিদ সারওয়ার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বনানী কামাল আতাতুর্কের দুই থেকে তিনটি ভবন বাদে সবগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে বাকি ভবনগুলোতে রোববারের মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।’
অকার্যকর ছিল অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, জরুরি এক্সিটও বন্ধ
