Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:18 pm

অগ্নিঝুঁকিতে যশোরের অধিকাংশ মার্কেট

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর:অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে যশোরের অধিকাংশ মার্কেট ও স্থাপনা। বেশিরভাগ ভবন ও মার্কেটের নেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। দু-এক জায়গায় থাকলেও সেটা মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব ভবন ও মার্কেটে যেকোনো সময় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে বিপুল পরিমাণ সম্পদহানির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া পানির তেমন কোনো উৎস না থাকা এবং দুর্ঘটনার সময়ে নিরাপদে বেরিয়ে আসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের পর এ জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন বিষয়টি নিয়েও তৎপর হয়ে উঠেছে।

যশোর জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তারা যশোরের আগুনের ঝুঁকিতে থাকা ভবন ও মার্কেট চিহ্নিত করছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শহরের অধিকাংশ ভবন ও মার্কেটে নেই কোনো নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা ব্যবস্থা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর শহরের বড়বাজার এলাকা। বৃহত্তর এ মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান থাকলেও প্রায় অধিকাংশ দোকানে নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। বাজারটিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের কোনো সুব্যবস্থা নেই। নেই পানির উৎসও। সবমিলিয়ে এ বাজারটি বড় ধরনের অঘিœঝুঁকিতে রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানান।

যশোর বড়বাজার এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাজারের ৯০ শতাংশ দোকানে নেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। কোনো দোকানের কোনায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার সিলিন্ডার ঝুললেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ। ব্যবসায়ীরা জানান, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। বড় বাজারের চুড়িপট্টি এলাকার হাজী আব্দুল করিম রোডে সবচেয়ে বড় স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি দোকান বিপি স্টোর। ওই দোকানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নেই কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সেলস ম্যানেজার প্রেম সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আগে কখনও ভাবেনি। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনের পর থেকে আমরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পাশেই স্টেশনারি প্রশাসধনীর বড় দোকান মদিনা স্টোরে গিয়েও দেখা যায় একই অবস্থা। সেখানেও নেই কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। দোকানটির ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, এ বাজারে দীর্ঘদিন অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে কারণে এ বিষয়ে আমরা চিন্তাও করেনি। এখন ভাবতে হচ্ছে।

ওই দোকানের বিপরীতে তোফায়েল স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঝুলানো রয়েছে একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। দোকানের ম্যানেজার আনন্দ দাস বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন আরেকটা এনে ঝুলিয়ে রেখেছি। তবে কীভাবে এটি বিপদকালীন সময় ব্যবহার করতে হয় তা কেউই জানেন না বলে তিনি জানান। শুধু বড়বাজার নয়। শহরের অন্যান্য মার্কেট ও বহুতল ভবনগুলোরও একই অবস্থা। বারবার অগ্নিকাণ্ডের শিকার কালেক্টরেট মার্কেটের কোনো দোকানেও নেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। অথচ এ বাজারটিতে গত ৫ বছরে ৪ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, যশোরের অধিকাংশ মার্কেট ও বহুতল ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা একেবারেই দুর্বল। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর বড় বাজার। বাজারটিতে অপরিকল্পিতভাবে মার্কেট গড়ে ওঠায় সেখানে কোনো গাড়ি প্রবেশের সুযোগ নেই। মার্কেটের পেছনে ভৈরব নদ থাকলেও গাড়ি প্রবেশের অবাধ সুযোগ না থাকায় সেখান থেকে দুর্ঘটনার সময় কোনো সুযোগ নেয়া দুরুহ হয়ে পড়বে বলে আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি।

তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর আমরা এ বিষয়ে সিরিয়াস হয়েছি। আমাদের অনুসন্ধানকর্মীরা খোঁজ নিচ্ছে কোন কোন ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। মার্কেটগুলোতেও কী অবস্থা আছে তাও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অগ্নিঝুঁকিতে আমরা সবচেয়ে যে বিষয়টি সিরিয়াস দেখছি সেটি হলো পানির উৎস। শহরের যেসব পুকুর-খানাখন্দ ছিল সেসব স্থানে এখন ভবন। এজন্য পানির সোর্স না থাকায় আমরা বড় বিপদে পড়ছি। সম্প্রতি চৌগাছা বাজারে আগুন নেভাতে গিয়ে পানির সমস্যায় পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে পানি নিয়ে সেখানে আগুন নেভানো হয় বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন লাগলে ফায়ার কর্মীরা ঘটনাস্থলে কখন যাবে বা আগুন নেভাবে এসব চিন্তা পরের। আগে প্রত্যেকের প্রতিষ্ঠানে বা বাসভবনে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপকের সুব্যবস্থা রাখতে হবে। সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নইলে দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।