Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:32 am

অগ্রগতি উৎসাহব্যঞ্জক নয়

চলমান রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির দপ্তরের মন্ত্রীর সাম্প্রতিক বৈঠককে এ পর্যন্ত একমাত্র স্বস্তিদায়ক খবর বলা যায়। বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের মনোভাব এ পর্যায়ে এসে দৃশ্যত কিছুটা ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। তবে আগামীতে এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে এটা স্পষ্ট হবে, না অস্পষ্ট থাকবে। তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এখনও অস্পষ্ট।

এখানে এসে ওঠা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় দু’পক্ষ একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপ গঠনে সম্মত হয়েছে বলে খবর রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক‚টনীতিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, সন্দেহ নেই। তবে এ ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধানের জন্য মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটি অবশ্য দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার পর নাগরিকত্বসহ সেখানে তাদের সাংবিধানিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হলে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে না। বঞ্চনা ও নির্যাতনের প্রক্রিয়া বহাল থাকলে পরবর্তীকালেও তাদের বাংলাদেশে আগমন অব্যাহত থাকবে। এ সমস্যা সমাধানে দেশটি ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী এগোনোর কথা বলছে, যাতে কোনো অর্থবহ সমাধান হবে বলে মনে হয় না। আমরা জানি, ওই ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত খোদ মিয়ানমার সরকারের দমন-পীড়নে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অব্যাহত ছিল। সাম্প্রতিককালে এটা চরম রূপ ধারণ করেছে, যেটাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছে খোদ জাতিসংঘ।

এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে রাখাইনে ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড পেয়েছে ৮ হাজারেরও কম রোহিঙ্গা। এ কার্ড বাদে তাদের আর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এদিকে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা নিবন্ধনের কাজও মন্থরগতিতে চলছে। তাই ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ‘যাচাই-বাছাই’য়ের মাধ্যমে ফেরত নেওয়া হবে এমন আশ্বাসে খুব আশান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ অবশ্য জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা ও কফি আনান কমিশন প্রস্তাবিত সুপারিশের পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। এ অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বিশেষত পশ্চিমাদের।

ওই বৈঠকের পর মিয়ানমার হতে কী সিদ্ধান্ত আসে, তার জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। আমাদের আশা, রোহিঙ্গা প্রশ্নে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক চাপ এর মধ্যে আরও বাড়বে, সেটি শক্তিতে পরিণত হবে এবং বিষয়টিকে আমলে নেবে মিয়ানমার। চাপে পড়ে হলেও দেশটি দ্রæততার সঙ্গে সাড়া দিলে তা আমাদের জন্য সুখবর। আগত রোহিঙ্গাদের জন্যও। জানা যায়, বৈঠকে প্রত্যাবাসনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির যে খসড়া প্রদান করা হয়েছে, তা সইয়ের এক মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উল্লেখিত রয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে এজন্য প্রস্তুতি থাকা দরকার। পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর ও নিয়ন্ত্রণ রেখে আর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণের দিকে যেতে হবে আমাদের।