অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া এনইসিতে উঠছে কাল

অগ্রাধিকার পাচ্ছে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসন

মাসুম বিল্লাহ: দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে মূল পরিকল্পনা দলিল পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। এরই মধ্যে দেশে সাতটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পরিকল্পনাটির খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এটি অনুমোদন জন্য আগামীকাল উত্থাপন করা হবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে। অনুমোদন হলে আগামী পাঁচ বছরের (২০২১-২০২৫) জন্য এটিই হবে দেশের প্রধান পরিকল্পনা দলিল। এ পরিকল্পনায় অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য নিরসনের ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বলে জিইডি সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটিকে দুটি খণ্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম খণ্ডে সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতসহ কৌশলগত নির্দেশনা ও নীতিকাঠামো বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে জাতীয় বাজেটের সঙ্গে সংগতি রেখে মোট ১৩টি খাতে (প্রতিরক্ষা ব্যতীত) খাতভিত্তিক কৌশল, কর্মসূচি এবং নীতিসমূহ বর্ণনাসহ প্রতিটি খাতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও সম্ভাব্য উন্নয়ন বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

অষ্টম পরিকল্পনায় বার্ষিক গড়ে আট শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ এ প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীতের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মেয়াদে এক কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান হবে ৩২ লাখ ৫০ হাজার। এ সময়ে শ্রমবাজারে যুক্ত হবে ৭৮ লাখ ১০ হাজার নতুন মুখ। পরিকল্পনা মেয়াদে মাথাগুনতি দারিদ্র্য হার ২০২৫ সাল নাগাদ ১৫ দশমিক ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, দরিদ্রবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুণগত শিক্ষা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও কভিড-১৯-এর ফলে সৃষ্ট সাময়িক বেকারত্বসহ বিদেশফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শ্রমবাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিতকরণ, আয়বৈষম্য হ্রাস, সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা, টেকসই নগরায়ণ, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিশেষত শিক্ষাকে ক্ষমতায়নের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, সেজন্য শিক্ষাকে সবার জন্য উম্মুক্ত এবং কারিগরি ও শিক্ষার গুণগত মানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন কৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা যায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বর্তমান অর্থমূল্যে মোট ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সরকারি খাত থেকে ১২ লাখ ৩০ হাজার ১২০ কোটি টাকা এবং ব্যক্তি খাত থেকে ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা অর্থায়নের প্রাক্কলন করা হয়েছে। মোট প্রাক্কলিত ৬৪৯৫৯৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে সাত লাখ ৪৭ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পরিকল্পনায় ২০২৫ সাল নাগাদ কর-জিডিপির অনুপাত বর্তমানের আট দশমিক ৯ শতাংশ থেকে থেকে ১২ দশমিক তিন শতাংশে উন্নীত করার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য শুল্কের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসকরণÑএই দুটি লক্ষ্য অর্জন করার নিমিত্ত রাজস্ব আইন অধিকতর সংস্কার এবং কর প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগের মতো কার্যকর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্য পরিকল্পনা দলিলে জাতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সামষ্টিক ও খাতভিত্তিক ১৫টি ক্ষেত্র পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে ১০৪টি সূচক-সংবলিত একটি ফলাফলভিত্তিক পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো সংযোজন করা হয়েছে। এ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামোর ভিত্তিতে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক পরিকল্পনা দলিলের মধ্যবর্তী ও সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০