অগ্রিম কর প্রত্যাহার চায় পোলট্রি মৎস্য ও ডেইরি খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের উৎপাদন এবং সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে মাছ, মুরগি ও পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত অগ্রিম কর (এটি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশসহ (ফিআব) পোলট্রি শিল্প-সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন।

উদ্যোক্তারা বলেছেন, অগ্রিম কর আরোপের ফলে পোলট্রিসহ প্রাণিসম্পদ খাতে অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল আমদানিতে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং পুঁজির সংকট তীব্রতর হয়েছে। অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে একটি সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানানো হয়েছে।

গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে এটিভি ও ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে ২০১৭ সালে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে। চলতি বাজেটে তা অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের কাছে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা হলে অগ্রিম কর প্রত্যাহারের আশ্বাস দেওয়া হয়।

এনবিআর গত ১৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের ‘প’ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংশোধনীতে ভুলবশত একটি এইচএস কোড যুক্ত করার কারণে পুরো সংশোধনীটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। উদ্ভূত সমস্যা উত্তরণে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে ফিআব-পূর্বের ন্যায় মূসক-৭-এর মতো একটি সার্টিফিকেট নিবন্ধিত পোলট্রি, মৎস্য ও ডেইরি ফিড প্রস্তুতকারকদের প্রদান করা, যার মাধ্যমে তারা সব ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর থেকে অব্যাহতি পাবেন; অথবা ‘প’ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত এইচএস কোডটি সরিয়ে দিয়ে ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক নিবন্ধিত পোলট্রি অথবা গবাদি পশু প্রতিষ্ঠান অথবা এনিমেল হেলথ কোম্পানি অথবা পোলট্রি, লাইভস্টক ও ডেইরি ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অথবা মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক নিবন্ধিত ফিশারি এবং মৎস্য ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসহ মৎস্য ও পশু খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহƒত অন্য সব আমদানিকৃত খাদ্য উপকরণ বা কাঁচামাল এবং একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চা’Ñএই সংশোধনীটি যুক্ত করে তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা।

ফিআব সভাপতি জানান, গত ১৭ অক্টোবর তারা এ মর্মে একটি আবেদন এনবিআরের কাছে জমা দিয়েছেন। তাছাড়া অগ্রিম কর প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) পক্ষ থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অপর একটি চিঠি জমা দেওয়া হয়েছে; এবং তারা আশা করছেন সরকার তাদের যৌক্তিক দাবি পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ফিআব সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কাছে এ বছর তিনটি দাবি পেশ করেছিলেন, যার একটিও পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, বাজেটে ফিডের উপকরণ হিসেবে যে তিনটি উপকরণে কর ও শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে ফিড ইন্ডাস্ট্রির কোনো সম্পর্ক নেই। পোলট্রি ও ফিশ ফিড তৈরির কাঁচামালগুলো এখনও মূলতই আমদানিনির্ভর। মোট চাহিদার মাত্র ৫০ শতাংশ ভুট্টা দেশে উৎপাদিত হয়, সয়াবিন উৎপাদিত হয় না বললেই চলে; তারপরও সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ সয়াবিন মিলের চাহিদা মেটে। অবশিষ্ট উপকরণগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

তিনি বলেন, বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো যেখানে পোলট্রি ও ফিশ ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল নিজ দেশে উৎপাদিত হওয়ার পরও খামারিদের ভর্তুকি দিচ্ছে; সেখানে আমাদের দেশে ভুট্টা, সয়াবিন মিল, ওষুধসহ পোলট্রি, মৎস্য ও ডেইরি ফিড তৈরির বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপ করা হয়েছেযা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।

তিনি আরও বলেন, মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে যখন আমাদের ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে, তখন দেশ থেকে ভুট্টা রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত রহিত করার দাবি জানান আহসানুজ্জামান। এর পাশাপাশি দেশের বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে দুই-পাঁচ শতাংশ হারে আরোপিত উৎস কর প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি।

আহসানুজ্জামানের মতে, কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত কর ও শুল্ক এবং পণ্য ছাড়করণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে কেজিপ্রতি ফিডের উৎপাদন খরচ তিন-চার টাকা; ব্রয়লার মুরগি ৮-১০ টাকা, মাছের সাত-আট টাকা এবং ডিমের উৎপাদন খরচ এক টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাশ্রয়ী মূল্যের ডিম ও মুরগির মাংস সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে; রফতানি সম্ভাবনা বিনষ্ট হবে, দেশীয় পোলট্রি শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, এসডিজি বাস্তবায়ন বিঘিœত হবে এবং গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিরা খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।

ওয়ার্ল্ড’স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সাবেক সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, শীতকাল আসন্ন। তাই এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কায় চিন্তিত পোলট্রি সেক্টর; কারণ বিগত দুই বছর ধরে এইচ৯এন২ ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা আমদানির অবেদন করা হলেও আজও তার অনুমতি মেলেনি।

তিনি বলেন, ২০০৭, ২০০৯ কিংবা ২০১১ সালের তুলনায় বর্তমানে পোলট্রি বার্ডের সংখ্যা প্রায় দুই কোটিরও অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া সোনালি মুরগির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রোগ-জীবাণুর প্রকোপ আগের চেয়ে বেড়েছে। তাই পোলট্রি শিল্পকে রক্ষার স্বার্থে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ দ্রুততার সঙ্গে আমদানি অনুমতি দেওয়া দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০