Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:47 am

অঙ্গীকার করে চার দিন পর বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে পেলেন খেলাপি করদাতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:কিছু বকেয়া কর পরিশোধ করা হয়েছে। আপিল করতে সার্টিফাইড কপি তোলা হয়েছে। করদাতা অঙ্গীকার করেছেন, ‘আপিলে হেরে গেলে বকেয়া কর পরিশোধ করবেন’Ñএমন অঙ্গীকারে চার দিন পর বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে পেলেন খেলাপি করদাতা বাদল চন্দ্র সাহা। তিনি মানিকগঞ্জের শহিদ রফিক সড়কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানের স্বত্বাধিকারী। গতকাল রোববার মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা সংযোগ পুনঃস্থাপন করেন। এর আগে বকেয়া কর পরিশোধ না করায় বুধবার (৫ জুলাই) এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কর খেলাপি হওয়ায় দেশে

আয়কর আইনে এই প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটেছে।

সূত্রমতে, কর অঞ্চল-১২, ঢাকার আওতাধীন সার্কেল-২৬৩ (মানিকগঞ্জ)। এই সার্কেলের করদাতা বাদল চন্দ্র সাহা। রোববার বাদল চন্দ্রের আইনজীবী বকেয়া করের ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। একইসঙ্গে আপিল করার জন্য সার্টিফাইড কপির জন্য ওই সার্কেলে আবেদন করেন; তাতে অঙ্গীকার করেন, আপিলে হেরে গেলে সব কর পরিশোধ করে দেবেন। পরে সার্কেল থেকে আইনজীবীকে সার্টিফাইড কপি দেয়া হয়।

সূত্র আরও জানায়, রোববার আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানে বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দিতে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপককে (ডিজিএম) চিঠি দেয়া হয়। সার্কেল-২৬৩ (মানিকগঞ্জ) সহকারী কর কমিশনার ইশতিয়াক হোসেন এই চিঠি দেন। মূলত করদাতা বকেয়া কিছু কর পরিশোধ করায় এবং করদাতা অঙ্গীকার করার কারণে বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানের স্বত্ব¡াধিকারী। মোবাইল ফোনে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। আপিলের জন্য কাগজপত্র নিয়েছি। আপিলে হেরে গেলে টাকা দিয়ে দেব বলে অঙ্গীকার করেছি। সে জন্য আমাদের বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, বাদল চন্দ্র সাহার ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৮ টাকা কর বকেয়া রয়েছে। প্রায় ৫ বছর আগের এই বকেয়া কর করদাতা পরিশোধ করেননি। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কর পরিশোধে ওই সার্কেল থেকে করদাতাকে ডিমান্ড নোট জারি করা হয়। ব্যবসা ভালো থাকলেও করদাতা বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন। এরপর থেকে কর পরিশোধে একাধিকবার তাগাদাপত্র দেয়া হয়। বকেয়া কর আদায়ে মানিকগঞ্জ উপকর কমিশনার কার্যালয়ের সহকারী কর কমিশনার মো. ইশতিয়াক হোসেন উদ্যোগ নেন। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ও ৭ জুন করদাতা বাদল চন্দ্রকে তাগাদাপত্র দেন। কিন্তু তিনি বকেয়া কর পরিশোধ করেননি। পরে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে গত ১৯ জুন সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ চিঠিতে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মানিকগঞ্জ জোনাল অফিস বরাবর আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অনুরোধপত্র দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, করদাতার কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১৪৩(২)(সি) ধারা অনুসারে উল্লিখিত করদাতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এরই আলোকে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবদুর রশিদ মৃধা সংস্থার আইন উপদেষ্টা এ কে এম কাইসারের কাছে আইনগত মতামত চেয়ে ২০ জুন চিঠি পাঠান। এরপ্রেক্ষিতে একেএম কাইসার গত ২ জুলাই করদাতার কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের স্বার্থে উক্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পক্ষে মতামত দেন। এরই ভিত্তিতে ৫ জুলাই দুপুরে আঁচল অভিজাত বস্ত্র বিতানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।