নিজস্ব প্রতিবেদক: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা অটোমেশনের ফলে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুজনের চাকরিই ঝুঁকিতে পড়বে। কর্মক্ষেত্রে মেশিনের গুরুত্ব বাড়বে, ব্যক্তির প্রয়োজন কমবে। শুধু তৈরি পোশাক খাতেই ২০৪১ সালের মধ্যে মোট কর্মসংস্থানের ৬০ শতাংশই চলে যাবে মেশিন বা রোবটের দখলে। প্রথাগত কর্মসংস্থানের অনেক পদই বিলুপ্ত হয়ে পড়বে বলে এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন বিশ্লেষকরা।
‘ফিউচার স্কিলস রিকোয়ার্ড ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন তারা। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেমিনারটির আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান।
ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ওসামা তাসিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুারোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম, বিসিক চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন রেজাউল করিম। বাংলাদেশের পাঁচ কর্মক্ষেত্রে অটোমেশনের প্রভাব তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। তৈরি পোশাক, কৃষি ও খাদ্য, ফার্নিচার, পর্যটন ও হসপিটালিটি, চামড়া ও পাদুকাশিল্পে কর্মসংস্থানের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হবে রোবট, অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) নেতৃত্ব যাবে এশিয়ার দেশগুলো থেকেই। বর্তমানে প্রতি বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১২ শতাংশ হারে। খুব দ্রুতই এ প্রবৃদ্ধি নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পাবে।
তৈরি পোশাক খাতের অনেক পদই বিলুপ্ত বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। এর মধ্যে এক ও দুই সুচবিশিষ্ট লক মেশিন অপারেটর, ফ্লোর সুপারভাইজার, প্যাটার্ন মেকার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, প্রডাকশন প্ল্যানার ও মার্চেন্ডাইজারের মতো পদগুলো অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। ফলে তৈরি পোশাক খাতের এসব পদের বিপরীতে কারখানা মালিকদের জনবলের প্রয়োজন হবে না। এ পদগুলো রোবট বা অটোমেশনের দখলে চলে যাবে। তারা আরও নিখুঁতভাবে কাজগুলো করে দেবে মানুষের বদলে।
অবশ্য মেশিন ও রোবটের কাজের পর্যবেক্ষণ, মেরামত ও নতুন ডিজাইনের মেশিন এবং সফটওয়্যার তৈরির কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এসব পদে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে।
অটোমেশনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে শ্রমঘন শিল্পে। প্রচলিত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো ক্রমেই অটোমেশনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অনেক চাকরিই হুমকির মুখে পড়বে। উৎপাদন ও সেবা খাতে অটোমেশনের হার সবচেয়ে বেশি হবে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে আগের তুলনায় বেশি হারে। অবশ্য আইটির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে নতুন কিছু চাকরিক্ষেত্রও তৈরি হবে। এজন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বের করতে হবে।
স্বল্পশিক্ষিত, তুলনামূলক কম আয়ের ও নারী কর্মসংস্থানের খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনতে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অটোমেশনে নিয়ে আসা। কর্মসংস্থান তৈরিতে সব ক্ষেত্রেই অটোমেশনে না যাওয়া এবং ধীরে ধীরে শিল্পের অটোমেশনে যাওয়া। বিশেষ করে এসএমই শিল্পে পর্যায়ক্রমে অটোমেশনে যাওয়া। এতে করে মানুষ ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। নতুন কর্মক্ষেত্র বা চাকরির জন্য নিজেকে তৈরিতে সময় পাবে।
প্যানেল আলোচনার পর ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসির বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সরকারের ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী জনবল তৈরিতে শিক্ষা খাতে সংস্কার আনা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়ভিত্তিক ও কারিগরি শিক্ষাকে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।