অতিথি পাখি নিধন বন্ধ হবে কবে?

পাখি আমাদের প্রকৃতিরই একটি অংশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধনে পাখিরা ব্যাপক ভূমিকার অধিকারী। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন রং-বেরঙের পাখি দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে হয় অর্থাৎ খাদ্যের সন্ধানে এবং একটু সুন্দর জীবনের প্রয়োজনে স্থান পরিবর্তন করতে হয়। বিশেষ করে উত্তর মেরু অঞ্চল, এশিয়ার কিছু অঞ্চল এবং সাইবেরিয়াসহ বেশ কিছু অঞ্চল থেকে আমাদের দেশে অতিথি পাখিদের আসতে দেখা যায়। তীব্র ঠাণ্ডা থাকার কারণে পাখিরা স্বভাবতই একটু উষ্ণ দেশের দিকে ধাবিত হয়। আর বাংলাদেশের আবহাওয়া হচ্ছে নাতিশীতোষ্ণ। আর শীতের তীব্রতা অতটা বেশিও না বলা যায়। তাই বাংলাদেশের অতিথি পাখিদের সমাগম ঘটে বেশি। তাছাড়া আমাদের এই দেশে প্রচুর পরিমাণে বনাঞ্চল এলাকা রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাভূমিতে অতিথি পাখিদের সমাগম ঘটে। এসব জায়গাগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে, শীতের মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে পরিযায়ী পাখিদের দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতিপ্রেমীরা এসব পাখিদের দেখার জন্য ভিড় জমান। খুবই সুন্দর দেখতে এসব আগত পরিযায়ী পাখিদের।

আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে যেকোনো অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি কিন্তু এসব আপ্যায়ন তো পাখিদের বেলায় ভিন্ন পরিচয় বহন করে। তখন সেটাকে আপ্যায়ন বলে না। অপমান বা নির্যাতন বলে। কেননা, আমাদের দেশে কিছু ভিন্নধর্মী মানুষ রয়েছে যারা অতিথি পাখিদের শিকারে গভীর মনোযোগী হয়ে ওঠেন। বেআইনিভাবে শিকারের পন্থা অবলম্বন করেন। বেআইনি পন্থায় কখনও জাল, কখনও ফাঁদ, কখনও বিষটোপ কিংবা কখনও বড়শি দিয়ে এসব পাখিদের শিকার করে বাজারে বিক্রি করেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল হলো চলনবিল। নাটোরে বিখ্যাত ওই চলনবিলেও প্রচুর অতিথি পাখিদের আসতে দেখা। অতিথি পাখিদের মধ্যে বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, জলপিপি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, সারস, কাইমা, শ্রাইক, মানিকজোড়াসহ আরও অনেক নাম না জানা পাখি দেখতে পাওয়া যায়। দুষ্ট চক্রের হাত থেকে সহজে রেহাই পান না ওইসব অতিথি পাখি। এজন্য অতিথি পাখিদের আগমন আগের তুলনায় ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-১৯৭৪ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুসারে বেআইনিভাবে পাখি শিকার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জেল, এক লাখ টাকা দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ পুনরায় করলে শাস্তি বা দণ্ড দ্বিগুণ হওয়ার ঘোষণাও রয়েছে। বন্যপ্রাণীদের প্রতি এমন অমানবিক, নিষ্ঠুরতার কাজ খুবই ঘৃণীত। প্রকৃতির প্রতি বিমুখী মানুষরাই এমন কাজ করে থাকে। পাখি নিধনের মাধ্যমে আমাদের প্রকৃতি ক্রমেই হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এজন্য পাখিদের সংখ্যা এবং উপস্থিতি ক্রমেই বিলুপ্তির পথে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যানার, পোস্টার বা মাইকিং করে জনমহলে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাখিরা প্রকৃতির বন্ধু, আমাদের বন্ধু এসব কিছুর বর্ণনা ফুটিয়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে, স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করে পাখি নিধন বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া শিকারিদের পাখিদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে। পাখিরা আমাদের কৃষির জন্য খুবই উপকারী। কেননা, অনেক পাখি কৃষির জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়তা করে থাকেন। তবুও আমরা অজ্ঞাতভাবে কেন পাখিদের শিকার করি? এসব পাখি কি প্রকৃতি অংশ নয়? এমন হাজারো প্রশ্ন থেকে যায়।

অতিথি পাখিদের পাশাপাশি দেশীয় পাখি শিকারও বন্ধ করে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।

মো. আকিব হোসাইন

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০