এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের গৃহীত ৪০ দিনের কর্মসূচির টাকা ইউপি চেয়ারম্যান হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে! শেষে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দাখিল হয়েছে লিখিত অভিযোগ। ওই প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগ এনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মুছার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন কর্মসূচিভুক্ত শ্রমিকরা।
আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় নাম থাকা নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ৯৪ জনের মধ্যে জাফরপুর গ্রামের আলাউদ্দিন, আক্তার হোসেন, রেজাউল করিম, আবুল হোসেন ও এরশাদ মিয়া নামের পাঁচজন শ্রমিক চেয়ারম্যান আবু মুছার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দাখিল করেন। কর্মসূচির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগটি করা হয়।
দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অতি দরিদ্রদের সহায়তায় সরকার টাকা দেবে বলে তাদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংক এশিয়ার ইব্রাহিমপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় হিসাব খোলা হয়। গত ৬ এপ্রিল তাদের প্রত্যেকের হিসাবে আট হাজার টাকা করে জমা হয়, যার মেসেজও আসে তাদের মোবাইলে। পরদিন সকালে চেয়ারম্যান, ব্যাংক কর্মচারীসহ তাদের বাড়িতে এসে মেশিনে তাদের আঙুলের ছাপ নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে যান।
ছাপ দেওয়ার পর ওইদিনই টাকা উত্তোলন হয়েছে বলে তাদের মোবাইলে মেসেজ আসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা টাকা পাননি। টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো চেয়ারম্যানের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। তারা বলেন, কর্মসূচিতে নাম থাকা অতিদরিদ্রদের কেউই টাকা পাননি।
বিগত চার বছর ধরে এভাবেই চেয়ারম্যান অতিদরিদ্রদের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর আগে জনতা ব্যাংকের ভোলাচং শাখা থেকে কর্মসূচির হিসাব পরিচালনা হতো। ওই ব্যাংকের ম্যানেজার অবৈধভাবে টাকা উত্তোলনে আপত্তি করায় ব্যাংকের শাখা পরিবর্তন করেন চেয়ারম্যান। কর্মসূচির তালিকায় চেয়ারম্যান তার কয়েকজন স্বজনের নাম রেখেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
স্বজনদের মধ্যে রয়েছেন, চেয়ারম্যানের আপন চাচাতো ভাই দুবাই প্রবাসী হাবিবুর রহমান লিটনের স্ত্রী বিউটি আক্তার, ইরাকে কর্মরত মো. দেলোয়ার হোসেন, ওমানে কর্মরত মো. আল-আমীন।
ব্যাংক এশিয়ার ইব্রাহিমপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কর্মকর্তা মারুফ হোসাইন ওই কর্মসূচির টাকা চেয়ারম্যান এবং নিকটবর্তীদের হাতে দেওয়া হয় জানিয়ে বলেন, ‘এতগুলো টাকা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আর অফিসে এলে ঝামেলা হয়। আমাদের কাছে এত টাকা ক্যাশও থাকে না। ফিঙ্গার নিয়ে চেয়ারম্যান বা নিকটবর্তী যারা আছেন তাদের কাছেই ওই টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।’ ৯৪ জন হতদরিদ্র্যের জন্য মোট সাত লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষÑজানান তিনি।
তবে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মুছা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘লেবারের টাকা লেবারই নিয়েছে। লেবার কাজ করছে। তাদের বাদ দিয়ে টাকা উঠানোর কোনোই সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে।’
নবীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘এই কর্মসূচির একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পান। এ থেকে ২৫ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখা হয়। সেই হিসেবে ৪০ দিনে একজনের মোট পাওনা আট হাজার টাকা হলেও সঞ্চয়ের এক হাজার টাকা বাদে তারা সাত হাজার টাকা পান। প্রত্যেক বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে এই কর্মসূচি হয়ে থাকে।’