আতাউর রহমান: রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ইকুইটি অ্যান্ড এন্ট্রিপ্রেনারশিপ তহবিল (ইইএফ) প্রকল্পের আওতায় তিন প্রতিষ্ঠানকে ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে ফার্নেস্ট অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্টস, এশিয়ান ফিশারিজ ও ভোলা অটো রাইস মিলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইসিবির দেয়া তহবিলের বিনিয়োগের বিপরীতে সরকারের বিভিন্ন হারে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আইসিবি অতিমূল্যায়িত, বন্ধ ও পরিত্যক্ত প্রকল্পে বিনিয়োগ করার ফলে সরকার তার মালিকানা অংশ পায়নি। সেই সঙ্গে বিতরণকৃত অর্থ আদায় না হওয়ায় ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
ফার্নেস্ট অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্টসকে অর্থ দেয়ার বিষয়ে জানা যায়, কোম্পানিটিকে ইইএফ সহায়তায় অর্থ দেয়া হয়। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ থাকায় পাঁচ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। নিরীক্ষায় দেখা যায়, আইসিবি মিশ্র সার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১১ কোটি ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে ৪৯ শতাংশ বাবদ পাঁচ কোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা দিয়েছে। এতে কোম্পানিকে ১ম, ২য় ও ৩য় কিস্তির মাধ্যমে যথাক্রমে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৯ হাজার, এক কোটি ৬৪ লাখ ৯৯ হাজার ও এক কোটি ১০ লাখ এক হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুসারে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে মিশ্র সার তৈরির বিষয়ে অনুমোদন নিতে হবে। শর্তটি পরিপালন না করে অনিয়মিতভাবে এ টাকা দেয়া হয়।
এদিকে আইসিবি কর্তৃক পরিদর্শনকালে প্রকল্পে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের ভেতরে মূল ফ্যাক্টরি তালাবদ্ধ ও সিলগালা অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ প্রত্যক্ষ করা যায়নি। প্রকল্পটি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটিতে ইইএফ সহায়তা দিয়েছিল তার সদ্ব্যবহার করা হয়নি।
এছাড়া আইসিবি কর্তৃক টাকা দেয়ার আগে প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে বলে শর্তে রয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করে প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন ছাড়াই ১ম কিস্তির অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুসারে প্রতি তিন মাসে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং বছর শেষের পরবর্তী চার মাসের মধ্যে কোম্পানির নিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানে জমা দেয়ার শর্ত থাকলেও তা পরিপালন করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে মঞ্জুরিপত্রের শর্তমতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিবেচনাপূর্বক মঞ্জুরিকৃত ইইএফ সহায়তার অর্থ কিস্তিতে দেয়া যাবে। কিন্তু প্রায় চার মাসের মধ্যে ইইএফ সহায়তার সব অর্থ দেয়া হলেও প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ইইএফ সহায়তায় দেয়া অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নথিতে উল্লেখ নেই। অপর শর্ত অনুসারে, ১ম কিস্তির অর্থ বিতরণের আগে উদ্যোক্তা কর্তৃক প্রকল্প ভূমির সীমানা চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করার শর্ত থাকলেও শর্তটি পরিপালন ছাড়াই ইইএফ সহায়তার সব অর্থ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুযায়ী মঞ্জুরিপত্র ইস্যুর তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে হবে। শর্তটি পরিপালনে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও ১ম কিস্তির অর্থ দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পের পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, প্রকল্পের উদ্যোক্তা কর্তৃক প্রকল্পের হিসাবগুলো, আর্থিক প্রতিবেদন, লেনদেন-সংক্রান্ত বিল ভাউচার ও নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে প্রকল্পের আর্থিক অবস্থা জানা যায়নি।
অপরদিকে ইইএফ সহায়তার সব অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ইইএফ সহায়তায় দেয়া সব অর্থ নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের পরামর্শ দেয়া হয়। এ
সময়ের মধ্যে অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা দায়েরসহ প্রযোজ্য অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া কথা বলা হলেও পরবর্তীকালে আর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে নিরীক্ষার সময় আইসিবি বলেছে, মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুযায়ী সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, ফরিদপুর কার্যালয় থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। পরিদর্শনকালে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়ায় ইইএফ লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে আলোচ্য প্রকল্পে উদ্যোক্তাদের রিকল নোটিশ দেয়া হয় এবং লিগ্যাল নোটিশ দেয়ার জন্য আইনজীবীকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশ মোতাবেক আইসিবি কর্তৃক কোনো কার্যক্রম নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে নিরীক্ষক।
এশিয়ান ফিশারিজের বিষয়ে জানা যায়, কোম্পানিটিতে বিনিয়োগের টাকা আত্মসাৎ, মাছ চাষের পরিবর্তে গবাদি পশু পরিপালন এবং প্রকল্পটি পরিত্যক্ত হওয়ায় সরকারের ৯১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বিস্তারিত নিরীক্ষায় দেখা যায়, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য এশিয়ান ফিশারিজকে এক কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার টাকার ইইএফ সহায়তা মঞ্জুর করা হয়। ১ম ও ২য় কিস্তি বাবদ ৯১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। পরে আইসিবির দুই কর্মকর্তা প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুযায়ী, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য এ বিষয়ে মঞ্জুরি দেয়া হয়। কিন্তু আইসিবির পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রকল্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেষ্টনী বা বেড়া নেই। প্রকল্পের সামনে বা অন্য কোনো স্থানে ইইএফের ফরম্যাট অনুযায়ী কোনো সাইনবোর্ড নেই।
প্রকল্পে চারটি পুকুর থাকলেও মাছ চাষ করতে দেখা যায়নি। পুকুরগুলোর গভীরতা অতি সামান্য, যার তলদেশে সামান্য পরিমাণে পানি জমে রয়েছে এবং পুকুরগুলোর অধিকাংশ স্থানই শুকনো। ফলে পুকুরগুলোয় মাছ চাষ হচ্ছে না বলে বোঝা যায়। অবশিষ্ট জমি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জমিতে প্রায় ৮৭৫ বর্গফুটের একটি আরসিসি পিলারের ওপর ইটের গাঁথুনিবিশিষ্ট ও অর্ধেক সম্পন্ন স্থাপনা দেখা গেছে, যা একেবারে পরিত্যক্ত ও গবাদি পশুর মলমূত্রে পরিপূর্ণ। ছাদ ঢালাই ও আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। উল্লিখিত স্থাপনাসংলগ্ন ও প্রকল্প ভূমির ওপর ৪০টি গাভী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেমিপাকা গরুর শেড ও ২৭টি ষাঁড়, গরু এবং গরুর খাবার দেয়ার পাত্র পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি গভীর নলকূপ, একটি লো লিফট পাম্প (পরিত্যক্ত অবস্থায়) ৩৩ জন কর্মচারীকে গরুর শেডে গবাদি পশুগুলোকে লালনপালনরত অবস্থায় দেখা গেছে।
এদিকে পরিদর্শন দল কোম্পানির বোর্ড মিটিংয়ের কাগজপত্র, আর্থিক প্রতিবেদন ও হিসাব-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে প্রকল্পের চেয়ারম্যান সেগুলো দেখাতে ব্যর্থ হন। এশিয়ান ফিশারিজ লিমিটেড, নোয়াখালী নামের প্রকল্পের অনুকূলে ইইএফ সহায়তা বাবদ বিতরণকৃত অর্থ প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে পরিদর্শন দলের কাছে স্পষ্ট হয়। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিত্যক্ত। সেখানে মাছ চাষের পরিবর্তে ডেইরি ফার্ম করে গবাদিপশু পালন করা হচ্ছে, যা ইইএফ নীতিমালা ও মঞ্জুরিপত্রের শর্তের পরিপন্থি। চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইইএফ সহায়তার ৯১ লাখ টাকা প্রকল্পে যথাযথভাবে বিনিয়োগ না করে প্রকল্পটিকে পরিত্যক্ত রাখা হয়েছে। ফলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে, যা সরকারি তহবিল তছরুপ ও তহবিল অব্যবস্থাপনার শামিল। আইসিবির মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুসারে, প্রকল্পে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে হবে বলে জানানো হয়।
এ অবস্থায় পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ইইএফ সহায়তা বাবদ দেয়া ৯১ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ জানানো হয়। ব্যর্থতায় সরকারি তহবিল তছরুপ ও তহবিল অব্যবস্থাপনার দায়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু চিঠি দেয়ার প্রায় ১ বছর পার হলেও উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে সরকারের উল্লিখিত টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় নিরীক্ষক।
এ বিষয়ে আইসিবি জানায়, প্রকল্পের অনুকূলে বিতরণকৃত অর্থ প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে আত্মসাৎ এবং বর্তমানে পরিত্যক্ত করে রাখায় আগামী (নিরীক্ষার সময়) ৩০ দিনের মধ্যে ইইএফ সহায়তা বাবদ দেয়া ৯১ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তারা যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ জানিয়ে প্রকল্পের নথি ইইএফ লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের আগে সব অর্থ ফেরতের জন্য চূড়ান্ত তাগাদা দেয়া প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে নিরীক্ষক বলেছেন, মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকল্প বিনিয়োগের টাকা আত্মসাৎ, মৎস্য চাষের পরিবর্তে গবাদি পশু পরিপালন এবং প্রকল্পটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে আনুকূল্য প্রদর্শন এবং ঋণ আদায় বিলম্বিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশ মোতাবেক আইসিবি কর্তৃক কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
ভোলা অটোরাইস মিলসের বিষয়ে জানা গেছে, মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ঋণ বিতরণ এবং শর্ত অনুযায়ী ইইএফ সহায়তার টাকা আদায় না হওয়ায় সরকারের ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নিরীক্ষায় দেখা যায়, ভোলা অটোরাইস মিলসকে ইইএফ সহায়তা বাবদ ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মূলধন দেয়া হয়। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার টাকার জায়গায় ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করে ইইএফ সহায়তার পরিমাণ ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এক্ষেত্রে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুযায়ী, প্রকল্পে উদ্যোক্তাদের ৫১ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে ইইএফের অর্থ বিতরণ করা হবে। তবে প্রকল্পে উদ্যোক্তার ইকুইটির সম্পূর্ণ অংশের স্থানে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। এরপর ইইএফ সহায়তার অর্থ নেয়ার আবেদন করা হলে শর্তসাপেক্ষে একটি কিস্তির অর্থ বিতরণ করার বিষয়ে বলা হয়। কিন্তু প্রকল্প পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রকল্পে উদ্যোক্তার মোট বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা ৪০ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থ থেকে ১৭ লাখ ১১ হাজার টাকা কম। উল্লিখিত বিনিয়োগ ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে ১ম কিস্তি বাবদ ২ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডিভিশনের অনুমোদন নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুসারে, নির্ধারিত ব্যয়ের থেকে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়োজন হলে উদ্যোক্তাদের নিজস্ব উৎস থেকে তা বহন করতে হবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত ব্যয়ের বিপরীতে আইসিবি ইইএফ ডিভিশনের কাছে কোনো সহায়তা দাবি করা যাবে না। এ শর্তও পরিপালন করা হয়নি। সেক্ষেত্রে ইইএফ সহায়তার পরিমাণ ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে গ্রাহকের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রতি তিন মাসে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং বছর শেষের পরবর্তী ৪ মাসের মধ্যে তাদের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানে দাখিলের শর্ত থাকলেও ২০১৭ ও ২০১৮ সালের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ১ম কিস্তি বিতরণের পর প্রায় ৬ বছর পার হলেও এবং প্রকল্পটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া ও চালু থাকা সত্ত্বেও মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুযায়ী উদ্যোক্তা কর্তৃক সরকারি শেয়ার বাই ব্যাক করা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ৩ একর প্রকল্প সম্পত্তির ক্রয়মূল্য ১০ লাখ টাকা হলেও ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পে উদ্যোক্তার বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইসিবি জানিয়েছে, প্রকল্পের অনুকূলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন ঋণ নেয়ার অনাপত্তি প্রদানের পরবর্তী সময়ে উক্ত ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে কি না, গ্রহণ করা হলে কাগজপত্র আইসিবিতে প্রেরণ ও ৪০ শতাংশ সরকারি শেয়ার বাই-ব্যাক বাবদ ২ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ এবং কোম্পানি আইন-১৯৯৪ অনুযায়ী কোম্পানি তিন মাসের প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তাগাদা দিয়ে আলোচ্য প্রকল্পের উদ্যোক্তা বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে নিরীক্ষা জানিয়েছে, বিনিয়োগ ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ১ম কিস্তির টাকা দেয়া এবং শর্ত ভঙ্গ করে ইকুইটির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্পত্তি অতিমূল্যায়নের ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়া হয়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া হয়নি। এছাড়া অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে জবাব দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শেয়ার বিজ থেকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলে তিনি ইইএফ প্রধান মহাব্যবস্থাপক তালেব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে জানতে আইসিবির ইইএফ প্রধান মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শেয়ার বিজ থেকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলে কোনো উত্তর দেননি।