অতিমূল্যায়িত শেয়ারদর: চার কোম্পানির বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় তিন সদস্যের এ কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কোম্পানি চারটি হচ্ছে তুং হাই নিটিং, রিজেন্ট টেক্সটাইলস, কে অ্যান্ড কিউ ও জুট স্পিনার্স।

জানা গেছে, বস্ত্র খাতের তুংহাই নিটিং ও রিজেন্ট টেক্সটাইলসের অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন, বিএসইসির উপপরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম মজুমদার, মোহাম্মাদ আল মাসুম মৃধা ও সহযোগী পরিচালক মো. বনি ইয়ামিন খান। বুধবার পৃথক দুটি আদেশ জারির মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৩ জানুয়ারি তুং হাই নিটিংয়ের শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর থেকে এটি বাড়তে বাড়তে ১৩ এপ্রিল ১৯ টাকা ৪০ পয়সায় ওঠে। তিন মাসের ব্যবধানে শেয়ারটির দাম বাড়ে ৫৬ শতাংশ। চলতি হিসাববছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০১৬-মার্চ ১৭) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৬১ পয়সা। গত ১৭ মে তারিখে শেয়ারটির মূল্য-আয় অনুপাত ছিল ১৯।

গত ২ জানুয়ারি রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম ছিল ১৫ টাকা ৭০ পয়সা। গত ১৬ এপ্রিল এটি বেড়ে ৩৬ টাকা ৩০ পয়সায় ওঠে। মাত্র সাড়ে তিন মাসে শেয়ারটির দাম ১৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। গতকাল কোম্পানিটি দর হারানোর শীর্ষে ছিল। সম্প্রতি ডিএসই’র দরবৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় স্থান পেয়েছিলো রিজেন্ট টেক্সটাইল। অন্যদিকে গত প্রায় এক সপ্তাহে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাতও (পিই রেশিও) প্রায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে সর্বশেষ ৩৫ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তাই ‘অস্বাভাবিক’ শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানতে গত ৯ এপ্রিল নোটিশ পাঠিয়েছিলো ডিএসই। যার জবাবে ‘সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই’ বলে জানিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল।

এ বিষয়ে রিজেন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব রিয়াজুল হক শিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শেয়ারদর হঠাৎ কেন বাড়ছে কিংবা শেয়ার নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি হচ্ছে কিনাÑ সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আর শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে যে অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই- সেই বিষয়টিও ডিএসইকে জানিয়েছি। এমনিতেও কোম্পানির শেয়ারদরের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, এমন সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে ডিএসইকে জানিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। তাই এ মুহূর্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কারণ মিথ্যা তথ্য, কারো প্ররোচনা কিংবা গুজবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।’

এদিকে জানুয়ারির শুরুতেও কে অ্যান্ড কিউর শেয়ারের দাম ছিল ৩৪ টাকা। গত ১৭ মে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ টাকা ৪০ পয়সা। এ সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। অথচ কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। নিজস্ব উৎপাদন বন্ধ থাকায় কারখানা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। চলতি হিসাববছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০১৬-মার্চ ১৭) কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান ৯৯ পয়সা। গতকাল ডিএসইতে দর হারানোর শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের দর কমেছে চার টাকা তিন পয়সা বা সাত দশমিক ছয় শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ ৫৪ টাকা দরে লেনদেন হয়। এদিন কোম্পানিটি ২০৬ বারে ২৮ হাজার ৯৯৮টি শেয়ার লেনদেন করে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি জুট স্পিনার্সের শেয়ারের দাম ছিল ৫৩ টাকা। গত ১৭ মে এর দাম দাঁড়ায় ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা। এ সময় দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। গত ছয় কার্যদিবসে জুট স্পিনার্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৩০ শতাংশ। কারণ ছাড়াই এ দর বেড়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। গত ৮ মে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৫০.৯ টাকা, যা ছয় কার্যদিবসের ব্যবধানে ১৭ মে লেনদেন শেষে ৬৬.৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ হিসাবে দর বেড়েছে ১৫.৫ টাকা বা ৩০ শতাংশ।

কোম্পানির শেয়ারদর এ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির আলোকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। এক্ষেত্রে জুট স্পিনার্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার মতো অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০