অতিরিক্ত মজুদে আড়তে পচে কোটি টাকার পেঁয়াজ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: এক মাস আগে হঠাৎ ভারতে বন্যার অজুহাতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৭৫ টাকা হয়ে যায়। অথচ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বেশিরভাগ আড়তে আগের আমদানি পেঁয়াজ মজুদ ছিল। যদিও বেসামাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানি শুল্ক তুলে দেয়। দাম বাড়ানোর সুযোগ নেয়ার জন্য পুরোনোদের সঙ্গে নতুন ও অনিয়মিতরা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে। এতে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পেঁয়াজ সরবরাহ বেড়ে যায়। এ কারণে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় দোকান ও গুদামে পচে যাচ্ছে পেঁয়াজ। আর দোকানগুলোর সামনে সারি সারি পচা পেঁয়াজের স্তূপ জমছে। কেউ আবার ময়লার ভাগাড় ও চাক্তাই খালে সরাসরি ফেলে দিচ্ছেন।

গত কয়েকদিন খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকা সরেজমিন দেখা গেছে, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় পেঁয়াজের পাইকারি দোকান ও গুদামে পচে যাচ্ছে পেঁয়াজ। বেশিরভাগ দোকানের সামনে সারি সারি পচা পেঁয়াজের স্তূপ। এসব পেঁয়াজের উৎকট গন্ধে চলাচল করা কষ্টকর। অনেকটা বাধ্য হয়ে পথচারী ও ক্রেতা-বিক্রেতারা নাকে হাত চেপে হাঁটছেন। গত ১২ থেকে ১৫ দিন ধরে এ দৃশ্যটা যেন স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা পচে যাওয়া এসব পেঁয়াজ ময়লার ভাগাড় ও চাক্তাই খালে ফেলে দিচ্ছেন। আবার কেউ ৮ থেকে ১০ টাকায় ভ্যানগাড়ি চালক ও ফেরিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে চাক্তাই এলাকার রাজাখালী ব্রিজ এলাকা ও পইলার পুল ব্রিজের নিচে দেখা মিলেছে পচে যাওয়া বস্তার স্তূপ। এমনকি খাতুনগঞ্জ এলাকায় ময়লার ভাগাড় থেকে কয়েকজনকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী এসব পেঁয়াজ বস্তা থেকে খুলে সড়কে শুকাতে দিয়েছেন।

পচে যাওয়া পেঁয়াজ শুকাতে ব্যস্ত আনোয়ার হোসেন নামের একজন শ্রমিক জানান, মিয়ানমার থেকে ট্রলারে আসার পথে বস্তায় পানি ঢোকায় পচে যায় বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ। নষ্ট পেঁয়াজের সংস্পর্শে ভালো পেঁয়াজও খারাপ হয়ে যায়। এছাড়া গত দুই সপ্তাহ আগে খুব বেশি গরম পড়েছিল, গরমেও পেঁয়াজ পচে যায়। শুকানোর পর বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালারা ভ্যানে বিক্রি করার জন্য পেঁয়াজগুলো ৫ থেকে ৭ টাকা কেজিদরে নিয়ে যাচ্ছেন।

গতকাল চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আর কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলেন, মূলত দেশের বাজারের পেঁয়াজ সংকট হওয়ায় দ্রুত মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। কিন্তু সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তারা এসব পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠায়নি। ফলে ৬০ শতাংশেরও বেশি পেঁয়াজই এসেছে পচে যাওয়া অবস্থায়। একটি ৫০ কেজি বস্তা থেকে মোটামুটি ভালো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ২০ কেজির মতো। বাকিগুলো কম দামে বিক্রি করা হয়। আবার কিছু নষ্ট ও পচে যাওয়া পেঁয়াজ ফেলে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, হঠাৎ দেশের বাজারে পেঁয়াজ সংকট দেখা দিলে ব্যবসায়ীরা দ্রুত মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ শুরু করেন। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে আমদানি পেঁয়াজগুলো দ্রুত পচতে শুরু করে। কারণ মিয়ানমারের রপ্তানিকারকরা রপ্তানি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে যেনতেনভাবে ট্রলারের পেঁয়াজ পাঠিয়ে দেয়। হয়তো ট্রলারের পেঁয়াজ পানি কিংবা কোনো কারণে পচতে শুরু করে। তাই ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার নিম্নমুখী। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট নেই। সরকার শুল্ক কমানোর পর বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ এসেছে।

উল্লেখ্য, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এ আমদানি চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০