অতিরিক্ত সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী মো. নূর-উন-নবী। বিভিন্ন ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড থেকে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই নেয় ঋণ। এ ঋণের বিপরীতে দক্ষিণ পতেঙ্গা ও কাট্টলি মৌজায় ২৭০ ডিসিমেল জমি বিচারের আগে অতিরিক্ত বন্ধকী হিসেবে নেয়ার জন্য আদালত রায় দিয়েছেন। গতকাল চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ রায় দেন। এ ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে টাকা অন্য খাতে সরিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তার কাছে পাঁচ ব্যাংকের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে শঙ্কায় রয়েছে।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পোশাক কারখানায় সুতা বেচাকেনা দিয়ে ব্যবসায়িক জীবন শুরু করে নূর-উন-নবী। তিনি নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে এসে প্রথমে এ ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় বিভিন্ন গার্মেন্টে সুতা সরবরাহ করতেন।

এরপর ব্যাংক থেকে ঋণসুবিধা পেতে একের পর এক গড়ে তোলেন নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আক্তার এন্টারপ্রাইজ, মেঘনা করপোরেশন, বলাকা হ্যাচারি, নূর-উন-নবী অ্যান্ড অ্যালাইড, নবী অ্যান্ড ব্রাদার্স, নবী অ্যান্ড কোং, আল নূর হজ্ব ও শাহজালাল ট্রেডার্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বলাকা গ্রুপ। এ গ্রুপের আক্তার এন্টারপ্রাইজ, নূর-উন-নবী অ্যান্ড অ্যালাইড ও শাহজালাল ট্রেডার্সের নামে ২০০৪-০৫ সালের দিকে কমার্স ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণসুবিধা নেন নূর-উন-নবী। মূলত কাপড় ও সুতা আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার জন্য ঋণ নেয়। আর ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানসহ নূর-উন-নবীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে ব্যাংকটি। বর্তমানে সুদাসলে প্রায় ১২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৯ সালে অর্থঋণ আদালতে ৭৪নং মামলার চলমান বিচারিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্পত্তি নিলামের আগে এ ঋণের বিপরীতে দক্ষিণ পতেঙ্গা ও দক্ষিণ কাট্টলি মৌজায় ২৭০ ডিসিমেল জমি বিচারের আগে অতিরিক্ত বন্ধকী হিসেবে নেয়ার জন্য আদালত রায় দেন।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানা যায়, নূর-উন-নবীর কাছে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাওনা রয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের প্রায় ১৭ কোটি ও প্রিমিয়ার ব্যাংক পাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এসব পাওনা আদায়ে এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের তৎকালীন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামসর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসুবিধা নেন নূর-উন-নবী। বিভিন্ন ব্যাংক তাকে ঋণখেলাপি হওয়ার পর পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়। তার পরও টাকা ফেরত না দেয়ায় ব্যাংকগুলো মামলা করে। কিন্তু পর্যাপ্ত জামানত না থাকায় মামলা দায়েরের পরও ঋণের টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চয়তায় আছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, নূর-উন-নবী নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিলেও এ অর্থ দিয়ে কৌশলে গড়ে তুলেছেন ছেলের প্রতিষ্ঠান ‘ড্রিম গ্রুপ’। ড্রিম গ্রুপ পরিচালনা করছেন নূর-উন-নবীর ছেলে সাফায়েত বিন নবী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী মো. নূর-উন-নবী বিভিন্ন ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড থেকে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই নেয় ঋণ। এ ঋণের টাকা আদায়ে কমার্স ব্যাংক ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। এ মামলায় ঋণের বিপরীতে পতেঙ্গা ও কাট্টলি মৌজায় ২৭০ ডিসিমেল জমি বিচারের আগে অতিরিক্ত বন্ধকী হিসেবে নেয়ার জন্য আদালত রায় দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০