Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:48 am

অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল চায় ডিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড মারাত্মকভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, রপ্তানিমুখী শিল্প কলকারখানা, স্থানীয় বাজার নির্ভর উৎপাদন খাত, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাত, সেবা খাত, অতি ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়, ট্রেডিং নির্ভর ব্যবসা, পরিবহন ব্যবসা, হোটেল, রেঁস্তোরা, মুদি দোকান, অপ্রচলিত খাত যেমন ভাসমান অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকান-পাট উদ্ভুত এ পরিস্থিতিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর এমন কি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর যাতে করে করোনা ভাইরাসের কোন প্রভাব না পড়ে সেজন্য সরকার অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) প্রধানমন্ত্রীর এমন সময়োপযোগী ও অর্থনীতিবান্ধব গৃহীত সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। একই সাথে রপ্তানিমুখী শিল্প সুরক্ষায় শ্রমিকদের বেতনাদি পরিশোধের সুবিধার্থে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করায় ডিসিসিআই সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এ উদ্যোগ রপ্তানিমুখী শিল্পকে কার্যাদেশ বাতিল, পণ্য পাঠাতে বিলম্ব এবং রপ্তানি আদেশ হ্রাস পাওয়ায় কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

ফরমাল (প্রচলিত) ও ইনফরমাল (অপ্রচলিত) খাতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ (এমএসএমই) অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও বর্তমানে এই এমএসএমই’দের আথিক অবস্থা দূর্বল হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির সকল স্তরে এমএসএমই’র অর্ন্তভুক্ত সকল খাত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ। অনেক এমএসএমই সীমিত বেচা-কেনা ও পুঁজি সংকটের কারণে খুব খারাপ সময় অতিবাহিত করছে। তাদের অনেকেই সময়মত শ্রমিক এবং কর্মচারীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছেনা যা বেকারত্ব বৃদ্ধির আশংকা তৈরি করেছে। এ দুঃসময়ে ঢাকা চেম্বার সরকারকে স্থানীয় এমএসএমই’র ব্যবসায়িক কর্মকান্ড স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা ও এমএসএমই সুরক্ষায় স্বল্প এবং মধ্য মেয়াদি আর্থিক, অনার্থিক নীতি পরিকল্পনা নির্ভর সহায়তা প্রদান করার জন্য আহ্বান  জানাচ্ছে।

আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া এমএসএমই এবং অপ্রচলিত খাতের সুরক্ষায় বেতনাদি পরিশোধের সুযোগ করে দিতে ডিসিসিআই সরকারকে ১ শতাংশ সুদে ৩ বছর মেয়াদি একটি জরুরি তহবিল গঠন করতে বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছে। যে সকল এমএসএমই’র বার্ষিক টার্নওভার ১ কোটি টাকা তাদের জন্য ১ শতাংশ আর যে সকল এমএসএমই’র বার্ষিক টার্নওভার ১ কোটি টাকার উপর তাদের জন্য ২ শতাংশ সুদ হারে উক্ত তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করা যেতে পারে। সারা দেশে বিসিক শিল্প নগরীর অন্তর্ভূক্ত কারখানাসমূহও এ বিশেষ জরুরী তহবিলের আওতায় আসতে পারে। আর এই ঋণ  পরিশোধের ক্ষেত্রে এমএসএমইর জন্য ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ড প্রদান করা যেতে পারে।   

এমএসএমই’র ক্ষেত্রে অনাদায়ী দেনাসমূহ আদায় হওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়বে কেননা সকল ব্যবসায়ীরাই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরণের অনিশ্চিত সময়ে এমএসএমই’র জন্য তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিসিসিআই এমএসএমই’র জন্য প্রদত্ত ঋণের সুদ আগামী ১ বছরের জন্য মওকুফ করার আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি ডিসিসিআই এমএসএমই’র অর্থায়ন সহজলভ্য করতে স্বল্প সুদে এবং সহজতর জামানত  শর্তে বিদ্যমান পুনঃঅর্থায়ন (এসএমই রিফিন্যান্সিং) তহবিলকে পূর্ব-অর্থায়ন (এসএমই প্রিফিন্যান্সিং) তহবিলে রুপান্তরের সুপারিশ করছে। এহেন কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যকে চাঙ্গা রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি আর্থিক সহযোগিতায় এ অতিরিক্ত অর্থায়নের সংস্থান হতে পারে। ক্রমহ্রাসমান বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের কারণে স্বাভাবিক ব্যাংকিং ব্যহত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অতিরিক্ত অর্থায়নকে প্রস্তাবিত পূর্ব-অর্থায়ন স্কীমের আওতায় আনা যেতে পারে। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এমএসএমই খাতকে সাধারণ ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যাবে। পাশাপাশি কোম্পানি আইনের আওতায় নিবন্ধিত সীমিত দায়বদ্ধ কোম্পানিসমূহকে ব্যাংক গ্যারান্টির শর্তকে আগামী ছয় মাসের জন্য শিথিল করতে ডিসিসিআই আহ্বান জানাচ্ছে।

এমএসএমই’র জন্য স্বল্প সুদে পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ করার জন্য ব্যাংক ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত তারল্যের প্রয়োজন। এ বাস্তবতা বিবেচনা করে নগদ সঞ্চয় অনুপাত বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও পলিসি রেট কমিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে গৃহীত ঋণের অর্থ পুনঃপরিশোধ সময়সীমা বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধির ন্যায় ব্যবসা-বান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে ডিসিসিআই সাধুবাদ জানাচ্ছে।   

এসবের পাশাপাশি ডিসিসিআই আগামী ছয় মাসের জন্য স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) হ্রাস করা এবং এডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) অর্থাৎ আমানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান করার হার শীথিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। তাছাড়া, ক্ষতিগ্রস্থ এমএসএমই’র উপর করের বোঝা লাঘব করতে তাদের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর জমাদান এ বছর স্থগিত রেখে তা আগামী তিন বছরে সমান তিনটি কিস্তিতে ভাগ করে রিটার্ণের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কোনরকাম জরিমানা ছাড়া প্রদান করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

বেশিরভাগ এমএসএমই ভাড়া করা জায়গায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকে। যে সকল এমএসএমই সরকারি জায়গায় যেমন বিসিক শিল্প নগরী বা ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত, সরকার তাদের ভাড়া ছয় মাসের জন্য মওকুফ করতে পারে। এমএসএমই কে সহায়তার অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ভাড়া, বিদুৎ, গ্যাস ও পানির বিল এবং লাইসেন্স নবায়নের উপর প্রযোজ্য ভ্যাট আগামী ছয় মাসের জন্য মওকুফ করা যেতে পারে। আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে যেমন খাদ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, মেডিকেল সরঞ্জামাদি, রপ্তানিমুখী উৎপাদনকারি কারখানার ক্ষেত্রে সরকার অগ্রিম কর (এটি) ও ভ্যাট আগামী ছয় মাসের জন্য অব্যাহতি দিতে পারে, যা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আবার সাবলম্বি হতে সাহায্য করবে। একই সাথে অগ্রিম কর এবং ভ্যাট ক্রেডিট ব্যবস্থাকে বেগবান করার জন্য প্রস্তাব করছে ডিসিসিআই, কারণ গতানুগতিক দীর্ঘ প্রক্রিয়া ব্যবসায় নগদ টাকার প্রবাহ ব্যহত করে।    

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের অপ্রচলিত ব্যবসায়িক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। এ খাতের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকগণ তাঁদের পুঁজি ও চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় পুঁজি ও চাকুরি হারানো ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ডিসিসিআই সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে সমুদ্র ও স্থল বন্দরসমূহে কন্টেইনার খালাস কার্যক্রম শ্লথ হয়ে গেছে। বিলম্বে খালাসের জন্য আমদানিকারকদের অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হচ্ছে। বন্দরের সীমিত কার্যক্রম বিবেচনায় রপ্তানিমুখী ও আমদানীকারক এমএসএমই ব্যাবসায়ীদের জন্য বিলম্ব জরিমানা ও ব্যাংক চার্জ মওকুফ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। 

যেহেতু করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের ইউরোপয়ী ইউনিয়ন, আমেরিকাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে তাই ডিসিসিআই সরকারকে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে আলোচনায় আমেরিকা থেকে জিএসপি সুবিধা পুণঃবহাল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জিএসপি প্লাস সুবিধা আদায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার সুপারিশ জানাচ্ছে। ডিসিসিআই মনে করে উক্ত  সুপারিশসমূহ কার্যকর করা হলে এমএসএমই খাত এই কঠিন সময়ের মধ্যেও টিকে থাকতে পারবে এবং ভবিষৎ অর্থনীতির শক্তিশালী ভীত রচনায় সহযোগী হবে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য ডিসিসিআই সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তি

####