অতীত দুর্নীতির বিরুদ্ধেও একই মনোভাব কাম্য

বুধবার রূপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান যে কথাগুলো বলেছেন, তা সঙ্গত কারণেই এর মধ্যে শেয়ার বিজসহ অন্যান্য পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। তিনি বলেছেন, ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডে যে কোনো পর্যায়ে দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে রূপালী ব্যাংক। উল্লেখ্য, আগের এমডি এম ফরিদউদ্দিনের মেয়াদ শেষ হলে গত ২৮ আগস্ট আতাউর রহমান প্রধানকে নিয়োগ দেয় সরকার। আর বুধবার অনুষ্ঠিত মতবিনিময়টি ছিল তার মেয়াদের ১০০ দিন অতিক্রম উপলক্ষে। কোনো ব্যক্তির পারফরম্যান্স বিচারের জন্য ১০০ দিন কম সময় বটে। তাছাড়া রূপালী ব্যাংকে আগে থেকে সৃষ্ট নানা ‘প্রতিবন্ধকতা’ সরাতেও সময় লাগবে তার। তবু এ মুহূর্তে তার দেওয়া আশার বাণীকেই কার্যকর দেখতে চাইবেন সবাই।

খেয়াল করা দরকার, জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৯ কোটি টাকা; যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত জুনেই পরিমাণটি ছিল দুই হাজার ৩৬১ কোটি টাকা; যা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বটে। স্পষ্টত তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৮ শতাংশের মতো; যা চিন্তার কারণ বটে। আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। তার কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশের শিল্প গড়ে উঠছে সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে।’ তার এ যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা কঠিন। তবু কথা হলো, যেহেতু জনগণের প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দায়বদ্ধতা বেশি, তাই ঋণ প্রদানে তাদের কী সর্বদাই আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল না? নিঃসন্দেহে রূপালী ব্যাংকের ঋণ নিয়ে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছেন একশ্রেণির ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীও। ঋণের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, ঋণখেলাপি বেশিরভাগই সাধারণত বড় ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরিস্থিতির কারণে খেলাপি এবং একশ্রেণি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ আদায় সুবিধাজনক হওয়ায় তাদের মধ্যে ঋণখেলাপি স্বভাবতই কম। এখন অনেকে নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন, রূপালী ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের মধ্যে কতজন বৃহৎ ও কতজন মাঝারি-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী?

আরেকটি বিষয়, রূপালী ব্যাংকের এমডি বলেছেন, ব্যাংকিং কার্যক্রমের যে কোনো পর্যায়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে ব্যাংক। প্রশ্ন হলো, এই জিরো টলারেন্স কীসের বিরুদ্ধে? আগামী দিনে সংঘটিতব্য কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে, নাকি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ যে কোনো সময়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে? এর উত্তর সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। মানুষ নিশ্চয়ই ভোলেনি, মাত্র কয়েক বছর আগেই দুর্নীতিমূলক কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে পড়ে আমাদের ব্যাংকিং খাতজুড়ে। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে বড় আকারের ঋণ জালিয়াতির খবর গণমাধ্যমে আলোড়ন তোলে সে সময়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও জনমনে প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ দুর্নীতি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ দরকার তো বটেই। অতীতের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। তাতে ভবিষ্যৎ অনেক সম্ভাব্য দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে বলেই বিশ্বাস। আর এ ব্যবস্থা শুধু রূপালী ব্যাংক নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও তেমন অঙ্গীকার গ্রহণ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০