অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজানানা অতীশা

শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর একাধারে বৌদ্ধ পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের রাজনৈতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। তাকে নিয়ে ‘অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজানানা অতীশা’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে।
তথ্যচিত্রটির প্রযোজক শহীদ-ই-হাসান তুহিন বলেন, আমরা প্রায় তিন বছর ধরে তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছি। যেহেতু অতীশ দীপঙ্কর এক হাজার বছর আগের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, তাই তথ্যচিত্রটির গবেষণায় বেশি সময় ব্যয় করেছি। গবেষণার জন্য আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হয়েছে।
বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জসহ ঢাকা, নওগাঁ, বগুড়া, কুমিল্লা ও ভারতের বিহার রাজ্যের নালন্দা এবং ভাগলপুর জেলার বিভিন্ন স্পটে তথ্যচিত্রটির শুটিং সম্পন্ন হয়েছে।
তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করছেন নির্তেশ সি দত্ত ও শহীদ-ই-হাসান তুহিন। এখন পোস্ট প্রডাকশনের কাজ করছেন তারা।
তথ্যচিত্রটি শুধু অতীশ দীপঙ্করের জীবনের জার্নিই নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক দলিলও। একটি আর্কিওলজিক্যাল ও ফিলোসফিক্যাল জার্নি। প্রায় এক হাজার বছর আগে বাংলায় পাল রাজত্বকালে ৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্ককর বিক্রমপুরের এক রাজপরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার ছোটবেলা কাটে বিক্রমপুরে। এখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা নেন। তৎকালীন পণ্ডিত ও বৈকারণিক জেতারির কাছেও তিনি শিক্ষা নেন। পণ্ডিতের পরামর্শে তৎকালীন মগধ অঞ্চলের ওদন্তপুরী বিহারে আচার্য শীলরক্ষিত, আচার্য বিদ্যাকোকিল, নালন্দা মহাবিহারের আচার্যবোধিভদ্রসহ অনেকের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। পরে বৌদ্ধ দর্শনের মহাযান ধারায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য সুবর্ণদ্বীপ (বর্তমান নাম সুমাত্রা) গমন করেন তিনি। সেখানে তিনি মহামহোপাধ্যায় ধর্মকীর্তির কাছে প্রায় ১২ বছর শিক্ষা নেন। সুবর্ণদ্বীপ থেকে ফিরে তিনি রাজা মহীপালের অনুরোধে মগধের বিখ্যাত বিক্রমশীলা মহাবিহারে প্রধান আচার্য হিসেবে যোগ দেন।
শিক্ষকতায় শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর প্রভূত সুখ্যাতি অর্জন করেন। এশিয়াজুড়ে তার পাণ্ডিত্বের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়ার বহু ছাত্র তার কাছে শিক্ষালাভ করেন। তিনি তন্ত্রমন্ত্রের অন্ধকারে আচ্ছন্ন এশিয়াকে আলোকিত করেন বলে তাকে ‘দ্য আই অব এশিয়া’ বলা হয়। পশ্চিম তিব্বতের সম্রাট লাহ্ লামা এশেওদের অনুরোধে শেষ জীবনে তিনি তিব্বত গমন করেন। সেখানে তাকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিব্বতে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর তার দর্শন প্রয়োগ করে মানব উন্নয়ন ঘটান। পাশাপাশি তিনি তিব্বতের কৃষিকাজে প্রথম সেচ ব্যবস্থার প্রচলন করেন। জনগণের মধ্যে তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক ওষুধ সেবনেরও প্রচলন করেন। অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতের লাসা শহরে ১০৫৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিব্বতের লোকজন তাকে আজও দেবতারূপে সম্মান করেন।

শেখ মোহাম্মদ রতন

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০