কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারি; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী। নারী জাতিকে নিয়ে কাজী নজরুলের বিখ্যাত একটি উক্তি যেখানে নারীকে দেয়া হয়েছে উচ্চ সম্মান। নারী জাতিকে সম্মান জানানোর, কাজের প্রশংসা এবং উৎসাহ জাগানোর প্রতিপাদ্যে প্রতি বছর ৮ মার্চ পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেসকোর তথ্য: ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। পরে রাশিয়ায়ও নারী দিবস পালিত হয় ৮ মার্চ। তারপর থেকে এদিনেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। লিঙ্গবৈষম্য দূর সমাজে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে নারীরা। উপমহাদেশসহ দেশের আর্থসামাজিক অবস্থানে নারীরা আগের তুলনায় অনেক অগ্রসর হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সম্মুখ যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার জন্য দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার নারী কৃষি, শিল্প ও সেবাসহ নানা খাতে অবদান রাখছে।
ক্রীড়াক্ষেত্রেও নারীরা পিছিয়ে নেই কোনো অংশে। নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে ক্রিকেট, ফুটবলসহ অন্যান্য খেলায় এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তারা এখন বিদেশেও তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে।
একটি পরিবারে পুরুষ যদি হয় জš§লগ্ন থেকেই নারীদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় তাদের অবস্থান পুরুষের চেয়ে নিচে। কন্যাসন্তান জš§ নিলে অনেক পরিবারে দেখা যায় অসন্তোষ। কারণ চিন্তানুযায়ী অবলা নারী পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরতে অক্ষম বরং তাদের ভরণ-পোষণ করাটাই যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় কন্যাসন্তান জš§ নিলে তাকে হত্যা করা হতো জšে§র সঙ্গে সঙ্গেই। এখন চিত্র কিছুটা পাল্টেছে কিন্তু বঞ্চনার হার আশানুরূপ কম।
ভারতীয় উপমহাদেশসহ দেশে এখনও নারীকে হেয় করার প্রতিপন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কন্যাসন্তান জš§দাত্রীকে অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পড়তে হয় কথার তোপে, কখনও সেটা শারীরিক নির্যাতনেও পৌঁছায়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রেও সমাজে পরিলক্ষিত হয় বৈষম্য। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায় মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করানোর পরেই বিয়ে দেয়ার তোড়জোড় চলে। একই পরিবারে ছেলেকে দেয়া হয় অবাধ স্বাধীনতা সে যতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।
সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নে নারীদের অবদান ৩৮ শতাংশ। দেশের স্বাস্থ্য খাতে নারীদের অবদান ৭০ শতাংশ এবং পোশাক খাতে অবদান ৮০ শতাংশ। সর্বক্ষেত্রে নারীরা এত অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও একটি পরিবারে মনে করা হয় নারীরা কিছু করতে পারে না, পারবে না। তাদের গৃহবধূ বানিয়ে রাখার প্রবণতা তুমুলভাবে দৃশ্যমান।
বিয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বেশি পরিস্ফুট। কনে পছন্দ করতে এসে এমনভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় যেন দোকানের কোনো পণ্য নির্বাচন করা হচ্ছে এবং যৌতুকের প্রচলন তো বেশিরভাগ অঞ্চলে রয়েছেই।
১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয় কিন্তু সে দেশেই একা চলতে গিয়ে বিভিন্ন সময় নারীদের হতে হচ্ছে যৌন নিপীড়নের শিকার।
প্রতিটি ধর্মই নারীকে দিয়েছে উচ্চ মর্যাদা কিন্তু বাস্তবে যখন তার প্রয়োগ করা হয় তখনই বেধে যায় বিপত্তি।
দেশ উন্নয়নের পথে এগোলেও নারীর সম্মান বা ক্ষমতায়ন কতটুকু এগোচ্ছে; সেটা ভাবার বিষয়।
রিয়া বসাক
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়