অধিকতর উন্নতির পথে বাধাগুলো অপসারণ করুন

প্রতিবারের মতো এবারও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বিভিন্ন দেশের অবস্থান তুলে ধরেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশ-সংক্রান্ত জরিপের প্রতিবেদন বুধবার প্রকাশ করলো সংস্থাটির গবেষণা সহযোগী স্থানীয় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। যে কোনো বৈশ্বিক প্রতিবেদন ছাপা হলেই আমাদের অনেকের মধ্যে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক থাকে সাধারণত এই ভেবে এবার কত ধাপ পেছালো বাংলাদেশ! তবে ডব্লিউইএফ প্রণীত ২০১৭ সালের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক ঘিরে তেমন উদ্বেগ নেই। কেননা গতকাল শেয়ার বিজে ছাপা ‘প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বাংলাদেশের সাত ধাপ উন্নতি’ শীর্ষক খবরটি আমাদের সুসংবাদ দিয়েছে; যদিও একে অবিমৃশ্য আনন্দের খবর বলা যায় না। কেননা সার্বিক সূচকে এক বছরে সাত ধাপ অগ্রগতি অর্জন করে এলেও এ অর্জন মূলত অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থার উন্নয়নের জন্যই। এর বাইরে আরও কিছু স্তম্ভ রয়েছে, যেগুলোর ভিত্তিতে নির্ণীত হয়েছে ওই সূচক; যথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্যবাজার, শ্রমবাজার, আর্থিক বাজার, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, বাজারের আকার, ব্যবসার সফিসটিকেশন, উদ্ভাবন প্রভৃতি। অন্যগুলো বাদ দিয়ে এক প্রযুক্তিগত দক্ষতা-সংক্রান্ত প্রায় সব সূচকেই বাংলাদেশের পারফরম্যান্স তেমন সন্তোষজনক নয়।

খেয়াল করা দরকার, অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থায় অগ্রগতি ঘটেছে বেশি; বিশেষত অবকাঠামো উন্নয়নে তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা ছিল দৃশ্যমান। সেজন্য বর্তমান সরকার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে বিদ্যমান দুর্বলতাগুলো দূরীকরণেও তাদের অধিকতর মনোযোগ দিতে বলবো আমরা। সেক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে ইস্যু অনুযায়ী বেছে বেছে। যেখানে উন্নতি ঘটানোর সুযোগ কম কিংবা কষ্টসাধ্য, সেগুলোকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, যেগুলোয় সহজে উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে জোর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি দেশের উদ্ভাবনী যোগ্যতা বহু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে; যেমন বিনিয়োগ, স্থানীয় সংস্কৃতি প্রভৃতি। বাংলাদেশিদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা নেই সে কথা বলবেন না কেউই। এখানেও বহু প্রতিশ্রুতিশীল উদ্ভাবন দেখা গেছে অতীত ও বর্তমানে। তাই বলে কেবল দেশের উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই সব মনোযোগ কেন্দ্রীভ‚ত করাটা ঠিক হবে না বলে কারও কারও অভিমত। সেক্ষেত্রে গবেষণায় এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মতো বিনিয়োগ বাড়াতে হবে আমাদের; যার বিপুলাংশ আবার অনুন্নয়ন ব্যয়। উন্নয়নের এ পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে তেমন উদ্যোগ নেওয়া কষ্টসাধ্য বলেই প্রতীয়মান। ফলে এ ধরনের সূচককে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া ভালো। নীতিনির্ধারকদের বরং নজর দেওয়া উচিত দুর্নীতি নির্মূল, আমলাতন্ত্রের দক্ষতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রভৃতি ইস্যুর ওপর। অস্বীকার করা যাবে না, দুর্নীতির প্রকোপ খানিকটা কমেছে আগের চেয়ে। তবে তাতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কতটা স্বস্তি বেড়েছে আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন সেবা নিয়ে তাদের অভিযোগ কিন্তু রয়েছে এখনও। আবার বড় ব্যবসায়ীদের বেলায় অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়; অথচ এখানে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে ব্যবসায়ীদের স্থিতিশীল নীতি-সহায়তা জোগানো।

এদিকে বেসরকারি খাতকে সহায়তায় যে ধরনের আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা প্রয়োজন, সেখানেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে কিন্তু। সবাই চাইবেন দুর্নীতি, অদক্ষতা প্রভৃতি ইস্যু ধরে তা হ্রাসের ওপরই সরকার জোর দেবে। সে ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। কৌত‚হলোদ্দীপক বিষয়, গত বছর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে দুর্বল অবকাঠামো আমাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এক বছরের মধ্যে তাতে সাত ধাপ উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়েছে। প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সেটি সম্ভব হতো না। আর ওই একই রকম অঙ্গীকার আমরা পরবর্তী ইস্যুতেও দেখতে চাই।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০