ব্যাংক খাতে বড় সমস্যা দেশে ব্যাংকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। বেশিরভাগই ব্যাংকের পরিচালনায় দক্ষতার অভাব রয়েছে। যারা পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তারা ঋণ বিশ্লেষণ এবং ঋণ থেকে নগদ প্রবাহ কী পরিমাণ আসতে পারে বা কী পরিমাণ আয় হতে পারেÑতা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না। ফলে ঋণ প্রস্তাব বিশ্লেষণ বাস্তবসম্মত হয় না। ব্যাংক খাতে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনেক ঋণ দেওয়া হয়। এসব ঋণ আদায়ে নমনীয়তা দেখানো হয়। ঋণখেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে ঋণ প্রদানের মাত্রা না কমে বরং আরও বাড়ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী।
ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় এটি নিঃসন্দেহ বলা যায়। ২০১০ সালের ধসের পর বাজার সেভাবে স্থিতিশীল হয়নি। ৯ বছর পরেও সূচক রয়েছে মাত্র চার হাজার ৭০০ পয়েন্টে। বাজার ভালো না হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। বিনিয়োগকারীর বাজারে আস্থা নেই। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করছেন বেশি। এখানে বিনিয়োগকারীর চাহিদার একটি বিষয় রয়েছে। ভালো মানের ইকুইটি আনা হচ্ছে না। পুরাতন যে শেয়ারগুলো রয়েছে সেগুলোই এখন কেনাবেচা হচ্ছে। বাজার খারাপ হওয়ার আরেকটি কারণ, মানি মার্কেট। বাজারে ব্যাংক খাতে প্রায় ৩০টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদি এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমতে থাকে তাহলেই এমনিতেই বাজারের সূচক ও টার্নওভারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রীসহ অনেক বিশ্লেষক বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংকের প্রতি বেশি নির্ভরতা দেখা যাচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাংক খাতের আরেকটি বড় সমস্যা দেশে ব্যাংকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। ফলে বেশিরভাগই ব্যাংকের পরিচালনায় দক্ষতার অভাব রয়েছে। ঋণ বিশ্লেষণ করা এবং ঋণ থেকে নগদ প্রবাহ কী পরিমাণ আসতে পারে এবং কী পরিমাণ আয় হতে পারে এটি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে না। ফলে ঋণ প্রস্তাব বিশ্লেষণ করা বাস্তবসম্মত হয় না। ব্যাংক খাতে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনেক ঋণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ঋণ আদায়ে নমনীয়তা দেখানো হয়। আরও দেখা যাচ্ছে ঋণখেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে ঋণ প্রদানের মাত্রা না কমে বরং আরও বাড়ছে।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, এ পুঁজিবাজার হচ্ছে ইকুইটি-নির্ভর বাজার। বলতে গেলে ইকুইটি পণ্য ছাড়া আর কোনো পণ্য নেই বাজারে। আর বন্ড যেগুলো রয়েছে সেগুলো কেনাবেচা হচ্ছে না। বাজার গতিশীল করতে হলে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আনতে হবে। এছাড়া ভালো মানের ইকুইটি আনা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেভাবে ভালো ইকুইটি আনা হচ্ছে না। এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও তেমন সক্রিয় ভূমিকায় নেই। আবার গত ছয় থেকে সাত মাস ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারী কম দেখা যাচ্ছে। তারা মনে করছে বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা তাতে এখানে বিনিয়োগ করাটা লাভজনক হবে না।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ