নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন এনায়েত হোসেন। শ্যামলী পরিবহনে রাত ৯টায় তার যাত্রা শুরু। কিন্তু কুমিল্লা এসে থমকে যায় সে যাত্রা। দীর্ঘ যানজট ভেঙে ঢাকায় পৌঁছাতে শুক্রবার দুপুর ২টা।
ঢাকায় ফিরে ক্লান্ত এনায়েত জনান, কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে এ যানজট শুরু হয় বলে জেনেছি। শুক্রবার দুপুরের আগে আগে আমরা কুমিল্লা পার হই। ওখানে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট ছিল।
এদিকে শুধু ওই পথেই নয়, গতকাল দেশের প্রধান কয়েকটি সড়কেও তীব্র যানজট ছিল। গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে গতকাল ২৫ কিলোমিটার যানজট ছিল। যা প্রায় সারা দিন অব্যাহত থাকে।
যানবাহন চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চন্দ্রা থেকে কড্ডা পর্যন্ত ১৫ ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে চন্দ্রা থেকে জিরানি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। তবে মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের চেয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।
যানজটের কারণ জানতে চাইলে সালনা হাইওয়ে থানার ওসি হোসেন সরকার জানান, সরকারি ছুটির কারণে মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ রয়েছে। তাছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে বিধায় মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে গতকাল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে দাউদকান্দি পর্যন্ত বড় যানজট ছিল। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় দাউদকান্দি সেতুর উপর ঢাকাগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে বিপরীত দিকগামী প্রাইভেটকারে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ফলে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। হাইওয়ে পুলিশ দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি উদ্ধার করে। রাতে সৃষ্টি হওয়া এ যানজট শুক্রবার পর্যন্ত আরও দীর্ঘ হয়।
অনেক রাস্তায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই যানজট শুরু হলে পুলিশ চেষ্টা চালিয়েও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। চালকদের বেপরোয়া, গতি, ওভারটেকিং, রঙ সাইডে যানবাহন চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় এ যানজট। শুক্রবার সকালে ওইসব যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বেশকিছু মামলা করে হাইওয়ে পুলিশ।
এদিকে শুক্রবার বিকালে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি আবদুল আউয়াল জানান, যানজট কমে এলেও যানবাহনের গতি খুব কম। তাছাড়া আজ (গতকাল) মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের চাপ খুব বেশি। তবে এখন গাড়ি ধীরগতিতে চলতে শুরু হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর থেকে শুরু হওয়া যানজট প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে গিয়ে থেমেছে। গতকাল কাঁচপুর সেতু হয়ে শিমরাইল গিয়ে শেষ হয় যানজট। শুক্রবার ভোর রাতে মহাসড়কের গজারিয়া এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনা, মেঘনা টোলপ্লাজায় ধীরগতিতে টোল আদায় ও মহাসড়কে ছুটির দিনে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ শরিফুল আলম জানান, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় শুক্রবার ভোর রাতে একটি সড়ক দুর্ঘটনা থেকে এ যানজটের সূত্রপাত। পাশাপাশি মেঘনা টোলপ্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে যানজট দীর্ঘ হতে থাকে। এ যানজট মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর এলাকা থেকে শুরু হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল পর্যন্ত গিয়ে পড়ে।
অপরদিকে গাজীপুরের মির্জাপুর থানার পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহাসড়কের ধেরুয়া এলাকায় দুটি বাস বিকল হয়ে পড়ে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এর কিছুক্ষণ পর কালিয়াকৈর ব্রিজের কাছে একটি ট্রাক বিকল হয়। এতে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি বিঘœ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ রাত ১২টার দিকে বিকল হওয়া যান রাস্তা থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল শুরু হয়। তবে অতিরিক্ত যানের চাপের কারণে যানজট অব্যাহত থাকে। এছাড়া শুক্রবার সকালে কালিয়াকৈর এলাকায় একটি ট্রাক রাস্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়ে। এতে আবারও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার এসআই মোতালেব হোসেন জানান, শুক্রবার ছুটির দিনের কারণে বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া রাতে যানবাহন চালকরা গাড়িতেই ঘুমিয়ে যান। তারা এলোমেলো গাড়ি চালান। এ কারণে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে।
Add Comment