Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:38 pm

অধিকাংশ সম্পদের ‘অস্তিত্ব’ নিয়ে আপত্তি কাটেনি এক দশকেও

পলাশ শরিফ: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রপার্টি, প্লান্ট ও ইক্যুইপমেন্ট হিসেবে প্রায় ১৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে, যা কোম্পানিটির মোট সম্পদের প্রায় ৫৯ শতাংশ। তবে কাগজে থাকলেও প্রপার্টি, প্লান্ট ও ইক্যুইপমেন্ট হিসেবে দেখানো ওই সম্পদের হদিস মিলছে না। এক দশক ধরে ওই সম্পদের কোনো নথিপত্র দেখাতে পারছে না পিজিসিবি, যে কারণে কোম্পানিটির সম্পদের ‘অস্তিত্ব ও বাজারমূল্য’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর বিপরীতে শুধু ‘সময়’ নিচ্ছে পিজিসিবি। অন্যদিকে সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের কারণে ‘অস্তিত্বহীন’ সম্পদের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায় ১৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ (নন-কারেন্ট অ্যাসেট) দেখিয়েছে পিজিসিবি। ওই তালিকায় পরিচালন মূলধন ব্যতীত জমি, অফিস অবকাঠামো ও যানবাহনসহ অন্যান্য সম্পদের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সম্পদের মূল্য আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ১৭২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বেশি। পিজিসিবি মোট সম্পদের সিংহভাগই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) কাছ থেকে পেয়েছে। কিন্তু বিপিডিবি ও ডিপিডিসির কাছ থেকে পাওয়া ওই সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পিজিসিবির কাছে নেই। এমনকি হস্তান্তরের সময়ের ওই সম্পদের বাস্তব উপস্থিতি ও মূল্য যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি। তারপরও ওই দুই সংস্থার দেওয়া হিসাবের ভিত্তিতেই প্রতি বছর স্থায়ী সম্পদের হিসাব করছে পিজিসিবি। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক বছর ধরে কোম্পানিটির মোট সম্পদের মধ্যে প্রায় ৫৮ দশমিক ৭৬ শতাংশের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এর বিপরীতে প্রকল্পের কাজ চলছে বলে জানিয়ে সময় নিচ্ছে পিজিসিবি।

পিজিসিবির সম্পদের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান একনাবীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোম্পানিটি আর্থিক বিবরণীতে স্থায়ী সম্পদ তালিকায় প্রপার্টি, প্লান্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট (পিপিই) হিসাবে প্রায় ১৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছে। তবে ওই সম্পদের মালিকানা ও উপস্থিতির বিষয়ে বিস্তারিত নথিপত্র রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এ কারণে বিপিডিবি ও ডিপিডিসির কাছ থেকে পাওয়া সম্পদের বর্তমান অবস্থান ও বাজারমূল্য সম্পর্কে নিরীক্ষকদের কোনো তথ্য দিতে পারেনি পিজিসিবি। ওই সম্পদের বর্তমান মূল্য, সম্পদের অধিগ্রহণ বা অর্জনের সময়কাল ও অবচয়ের হার সম্পর্কেও কোনো তথ্য পিজিসিবির কাছে নেই। এক্ষেত্রে পিজিসিবি বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডসের (বিএএস) এ-সংক্রান্ত নির্দেশনাও পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।’

পিজিসিবির কোম্পানি সচিব জাহাঙ্গীর আজাদ শেয়ার বিজকে এ বিষয়ে বলেন, ‘সম্পদের হিসাব নিয়ে নিরীক্ষকের আপত্তি এড়াতে আমরা কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। প্রথমে এটি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ-সংক্রান্ত সফটওয়্যার তৈরির জন্য প্রকল্প নিয়েছি, ওই প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও এক-দেড় বছর সময় লাগতে পারে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্পদের হিসাব তৈরি ও তা সংরক্ষণের জন্য এর আগে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ও একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মকে দায়িত্ব দিয়েছিল পিজিসিবি। কিন্তু প্রায় দুই বছর সময় নিয়েও প্রতিষ্ঠান দুটি চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই ২০১৭ সালেই তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে পিজিসিবি। এরপর সম্পদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য সফটওয়্যার তৈরির জন্য পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারপরও সংকট কাটেনি। ২০১৮ সালের পর থেকে ‘আরও সময় লাগবে’ বলে জানাচ্ছে পিজিসিবি। এ বিষয়ে পিজিসিবির পক্ষ থেকে দেওয়া ব্যাখ্যায় কয়েক বছর ধরেই ‘পরিচালনা পর্ষদের দিকনির্দেশনা মেনে সম্পদের তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে’ বলে দাবি করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পিজিসিবির সম্পদের অস্তিত্ব নিয়ে নিরীক্ষকের প্রশ্ন নতুন নয়। ২০১০ সালে তৎকালীন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান একনাবীন প্রায় তিন হাজার ৩৩৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এর পর থেকে আট বছর ধরে একই বিষয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে। ২০১৭ সালে দুই নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান এ কাশেম অ্যান্ড কোং এবং এস এফ আহমেদ অ্যান্ড কোং প্রায় ১১ হাজার ৫১২ কোটি টাকার সম্পদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।