নিজস্ব প্রতিবেদক: মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট পরিশোধসহ সার্বিক কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক করার প্রক্রিয়া আরও তিন মাস পেছাল। ভ্যাট ব্যবস্থা অনলাইন করতে পুরোনো ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) পরিবর্তন করে ৩১ মার্চের মধ্যে নতুন ইলেকট্রিক (ই-বিআইএন) নিতে সব ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ১ এপ্রিল থেকে ভ্যাটের সব কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্নের পরিকল্পনা ছিল। এখন এ কার্যক্রম ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে শুরু হবে।
জানা যায়, ই-বিআইএন নম্বর নিতে আট লাখ ৭৫ হাজার বিআইএন বাতিলের ঘোষণাও দিয়েছিল এনবিআর। এরই মধ্যে ৯২ হাজার প্রতিষ্ঠান নতুন করে নিবন্ধন নিয়েছে। তবে আইনি সংশোধন সম্পন্ন না হওয়ায় অনলাইন কার্যক্রম পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, সফটওয়্যার-সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন হলেও আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় পুরোনো বিআইএন বাতিল করতে পারছে না এনবিআর। একই সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে একাধিক হারে ভ্যাট আদায়ের পর তা সমন্বয় নিয়েও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। ফলে পুরোনো আট লাখ ৭৫ হাজার নিবন্ধন বাতিল করে সম্পূর্ণরূপে অনলাইনে যাচ্ছে না তারা। আইনটি সংশোধনে এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগ এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র পৃথক প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে ভ্যাট অনুবিভাগ। প্রস্তাবনার আলোকে আইন সংশোধনসহ তিন মাসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী ১ জুলাই থেকে অনলাইন পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে।
এনবিআর সদস্য (ভ্যাটনীতি) ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিদ্যমান আইনেই অনলাইন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৯ ডিজিটের ভ্যাট নিবন্ধন নতুন আইনের জন্য করা হলেও তা পুরোনো আইনেই সংযুক্ত করা হচ্ছে। ভ্যাটের একাধিক হার ধরেই সফটওয়্যার নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে কিছু পরিবর্তন এনে অনলাইন চালু করার কথা
ছিল। এ লক্ষ্যে নতুন করে নিবন্ধন ও কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে পণ্য ও সেবাভেদে ভ্যাটের হার, রেয়াত গ্রহণ পদ্ধতি, ভ্যাট প্রদানকারীকে এনবিআরের কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে সংযোজনসহ বেশ কিছু আইনি সংশোধনের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরোপুরি অনলাইন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
আগামী বাজেটের আগেই আইনি সংশোধন শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন অর্থবছর থেকে ভ্যাট ব্যবস্থা পুরোপুরি অনলাইন করা যাবে। তবে ই-বিআইএনে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে এখনও অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধ করতে পারবে বলে জানান তিনি।
ই-বিআইএন নম্বর গ্রহণ, ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়া ও অর্থ পরিশোধসহ ভ্যাটের সব ব্যবস্থা অনলাইনে করার পরিকল্পনা নিয়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছিল। আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে ৫৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পও নেওয়া হয়। সব প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে সেবা দিতে গেল বছরের মার্চ থেকে নতুন করে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ই-বিআইএন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের কাজের শেষ পর্যায়ে এসে আইনটির বাস্তবায়ন আবারও পিছিয়ে যায়। ফলে পুরোনো আইনেই অনলাইন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পের বাজেট বাড়িয়ে এরই মধ্যে সফটওয়্যার সংযোজনের কাজও প্রায় শেষ করেছে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের আইনের সøাভভিত্তিক ভ্যাটহার সামনে রেখেই সাজানো হয়েছে অনলাইন পদ্ধতি। গত বছরের ১৫ মার্চ থেকে সব শ্রেণির ব্যবসায়ীর জন্য অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা এখনও চলমান। পুরোনো বিআইএনে আট লাখ ৭৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের তালিকা থাকলেও নতুন পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত ৯২ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান ই-বিআইএন নিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যমান ভ্যাট আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও এখনও তা সম্পন্ন করতে পারেনি এনবিআর। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও এনবিআরের ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে।
প্রসঙ্গত, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের লক্ষ্য নিয়ে চলতি অর্থবছরের জন্য শুধু ভ্যাট খাতে ৯১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর, যা গত বছরের তুলনায় ৩২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। যদিও এ খাত থেকে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৪৮ হাজার ৯০২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব এসেছে ৪১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ঘাটতি রয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।