নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হলে নির্বাচনী ‘বিধি ভঙ্গের সংস্কৃতি ও অনাচার’ দুটোই কমে আসবে বলে আশা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ উদ্বোধন করে প্রার্থী ও ভোটারদের অনলাইন পদ্ধতি ও অ্যাপ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি।
তার কথা হলো, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে অনেক সময় সংঘাতের নানা ঘটনা ঘটে, এই অ্যাপ ব্যবহারের ফলে সেটি ‘কমে আসবে’।
তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে শোডাউন করা হয়। এই শোডাউন কালচার বা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও সংস্কৃতি, কিন্তু এখানে সংকটও হয়ে থাকে। এই সংকটে নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ হতে পারে। অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। মনোনয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে অনেকে বাধাপ্রাপ্ত হন। সাবমিশন করার পর চাপ প্রয়োগ করা হয় নমিনেশন প্রত্যাহার করার জন্য। এই যে অনাচারগুলো হয়, অনলাইন সিস্টেমে অনাচারগুলো কমে আসতে পারে। অনলাইন সাবমিশনের ফলে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও পরিশুদ্ধ হতে পারে।’
অ্যাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিবন্ধিত দলের উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ওএনএসএস হলো সব প্রার্থীর জন্য। আর স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপটি সাধারণ মানুষের জন্য। ওএনএসএস ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ চালু করা হলেও রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রচলিত পদ্ধতিতে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থাও রেখেছে নির্বাচন কমিশন। এই অ্যাপ ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার চালানোর জন্যও তাগিদ দিয়েছেন সিইসি।
গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদকে সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আসতে পারে তফসিল। তফসিল ঘোষণার আগে ওএনএসএস ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ সবার জন্য উš§ুক্ত করল কমিশন।
সিইসি বলেন, ‘প্রযুক্তির যে পরিবর্তন ৫০ থেকে ৬০ বছরে যা হয়েছে, এটা অবিস্মরণীয়। প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে যদি না পারি তবে পিছিয়ে যাব। অনলাইনে সাবমিশন সিস্টেম ব্যবহার খুবই সহজ। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে, আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। এটা অনেক আধুনিক হবে।’
অনলাইন ভোটিং প্রসঙ্গে সিইসি জানান, ঘরে বসে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা এখনও পৃথিবীর কোথাও চালু হয়নি। তবে ভারত চেষ্টা করছে ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ভোট নেয়া যায় কি না। ভারত সফল হলে আমরাও প্রবর্তন করতে পারব। তবে কবে চালু হবে তার নিশ্চয়তা এখন দিতে পারছি না।
অ্যাপে কী মিলছে
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান জানান, অ্যাপটির মাধ্যমে একজন ভোটার ঘরে বসে তার ভোটার নম্বর জানতে পারবেন। পাশাপাশি তার ভোটার এলাকা, নির্বাচনী আসন ও ভোটকেন্দ্রের নাম জানা যাবে। এতে ভোটকেন্দ্রের ছবি এবং ভোটকেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান ম্যাপসহ দেখা যাবে।
এর মাধ্যমে বিভাগওয়ারি আসনগুলোর তথ্য, যেমন মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্যও (হলফনামা, আয়কর-সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী) থাকবে। এর মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলি নোটিস আকারে প্রদর্শিত হবে। প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর চলমান ভোটিং কার্যক্রমের তথ্য এবং শেষ পর্যন্ত কত ভোট পড়ল, সেই তথ্যও অ্যাপে থাকবে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।