পুরো বিশ্বই একটি ভয়াবহ সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। গৃহবন্দি হয়ে আছি আমরা সবাই। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে করোনাকালীন এ সময়ে বন্যার হানা। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। করোনার কারণে অনেকের চাকরি চলে গেছে। কর্মসংস্থান হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে অনেকের। বানের জলে ভেসে গেছে অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি। মোদ্দা কথা করোনাকালীন এ সময়ে আমরা কেউই ভালো নেই।
গত মার্চের দিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়ছে সেশনজটের আশঙ্কা। এ অবস্থায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। প্রথমদিকে এ কার্যক্রম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চললেও এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এটি হাতে নিয়েছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সেশনজট কমানো গেলেও শিক্ষার্থীরা কি এটি থেকে উপকৃত হচ্ছে এটা প্রশ্নের বিষয়। কেননা অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন গ্রামে অবস্থান করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণত ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। আবার লোডশেডিং তো আছেই। একটু ঝড়বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আর চলে গেলে কখন আসবে তারও ঠিকঠিকানা থাকে না। ইন্টারনেট ধীর গতির কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে নিজ বাড়ি ছেড়ে দূরবর্তী কোনো জায়গায় অবস্থান করতে হয়। কখনও কখনও গাছের ডালে কিংবা বাড়ির ছাদে উঠে ইন্টারনেট পেতে হচ্ছে তাদের।
অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী নিন্ম বিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। শহরে টিউশন করে কিংবা আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় অনেক কষ্টে পড়াশোনা চালাতে হয় তাদের। পার্ট টাইম জব করে নিজের পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি পরিবারের খরচ চালান, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। করোনার ধাক্কায় এ সুবিধাটুকুও হারিয়েছে তারা। বৈশ্বিক দুর্যোগকালীন এ সময়ে এসব শিক্ষার্থীর পরিবারে যখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা; তখন ডেটা কিনে অনলাইন ক্লাস করা তাদের জন্য অসম্ভব ব্যাপার। অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার জন্য যেসব ডিজিটাল ডিভাইস (ল্যাপটপ, স্মার্টফোন) প্রয়োজন অনেকের তাও নেই। অন্যদিকে যাদের সঙ্গে আছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ইন্টারনেটের কচ্ছপ গতি, ইন্টারনেটের চড়া মূল্য, পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক না থাকা ইত্যাদি কারণে তাদেরও ক্লাসে যুক্ত হতে বেগ পেতে হচ্ছে। শহরের ছেলেমেয়েরা তথ্যপ্রযুক্তিতে কিছুটা অগ্রসর সুবিধা পেলেও গ্রামাঞ্চলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বরাবরের মতোই তা থেকে বঞ্চিত।
এত সব অনিশ্চয়তায় তাহলে কি শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে? এ সংকটের মাঝেও আমাদের আশার আলো খুঁজতে হবে। যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে সমাধানও আছে। এক্ষেত্রে সরকার ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে আন্তরিক হতে হবে।
মারুফ হোসেন
শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়