Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 3:27 pm

অনলাইন ক্লাস: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

আবু ফারুক: শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু জীবন ও শিক্ষার জটিল সমীকরণে জীবনের প্রাধান্য পাওয়াটা অনিবার্য। আর তাই বিশ্বের বাঘা বাঘা অনেক দেশ যখন মহামারি করোনা-১৯-এর তাণ্ডব থেকে শিশুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে, তখন আমরা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছিলাম অদৃশ্য এই প্রাণঘাতী শত্রু যেন আমাদের সীমানায় প্রবেশ না করে। কিন্তু বিধি বাম! ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার অল্প কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকজন আক্রান্ত হয়। সরকার দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে ১৭ মার্চ থেকে প্রাথমিক স্তরসহ সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। দফায় দফায় ছুটির মেয়াদ বেড়ে সেই বন্ধ আগস্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে। বর্তমানে সংক্রমণ পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। তাই সেপ্টেম্বরেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারটা এখনও অনিশ্চিত। দেশব্যাপী সাধারণ ছুটির মধ্যে চলতি সালের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলেও এখনও হয়নি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা গ্রহণের কথা ভাবছে সরকার। শত প্রতিকূলতায়ও সময় ও জীবন স্থির থাকে না। প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়মকে মেনে নিয়ে একটানা দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও তাই সরকার একদম বন্ধ রাখেনি। এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে।

শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম সাবলীল গতিতে চালানো না গেলেও শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি লাঘব এবং মানসিক অস্থিরতা ও অবসাদ দূর করতে টেলিভিশন ও অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে পাঠদানের কাজ শুরু করা হয়। সর্বপ্রথম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের (মাদরাসাসহ) শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ঘরে বসে শিখি’ কর্মসূচির মাধ্যমে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে রুটিন অনুযায়ী পাঠদান কার্যক্রম সম্প্রচার করা হয়। এরপর অনলাইনে শুরু হয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কার্যক্রম। এছাড়া ১২ আগস্ট থেকে রেডিওর মাধ্যমেও প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ সম্প্রচার করা হচ্ছে। কেবল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাই নয়, করোনার কারণে দেশের ৬৮টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) শুরু হতে না হতেই বন্ধ হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএড প্রশিক্ষণের শ্রেণি কার্যক্রমও চলছে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চলমান পাঠদান কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক শিক্ষক স্বপ্রণোদিত হয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে তারা তাদের পাঠ উপস্থাপন করছেন। বিদ্যালয়ের কাছের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং অন্যরা নিয়মিত মোবাইল ফোনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের  সঙ্গে পড়ালেখা ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কথা বলছেন। প্রতি সপ্তাহে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা ভার্চুয়াল সভায় মিলিত হয়ে উদ্ভূত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে আলোচনা করছেন। এতে যুক্ত হচ্ছেন অনেক অভিভাবকও। এককথায়, দেশের শিক্ষাক্ষেত্র এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে শ্রেণিতে পাঠদান চলছে। শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরিসহ প্রয়োজনীয় অনেককিছুই শেখানো হচ্ছে এবং আশার কথা হলো, ডিজিটাল পদ্ধতির এমন পাঠে শিক্ষার্থীদের সাড়া ও সক্রিয়তাও দারুণ ইতিবাচক। এতদিন পর্যন্ত এতটুকুই ছিল ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার। কিন্তু চলমান করোনাকালে শ্রেণিকক্ষের বদলে টিভি, রেডিও, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আর কম্পিউটার হয়েছে একেকটি শিক্ষা কেন্দ্র। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই দেখছে, শুনছে, পড়ছে ও শিখছে। অভিভাবকদের সম্পৃক্ততাও বাড়ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল পদ্ধতির  সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত হলেও প্রথম দুই পর্যায়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। শিক্ষার্থীদের বোঝানো গেছে, এটা অপ্রত্যাশিত ক্রান্তিকালীন ছুটি। যে কোনো অবস্থাতেই পড়ালেখার গুরুত্ব গৌণ না ভাবার বার্তাটাও এর মাধ্যমে দেওয়া গিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনলাইন ক্লাস নিশ্চিতভাবেই যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। তবে যেতে হবে অনেক দূর। অনেক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি প্রত্যাশিত গন্তব্যের পথে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ও উপযোগিতা মূল্যায়নের চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে দুর্যোগকালীন সম্পূর্ণ ডিজিটাল যন্ত্রনির্ভর পাঠদান। উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত হওয়ার পাশাপাশি সহজ হবে সমাধানের পথ বের করা।

অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের কাছে টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ প্রভৃতি যোগাযোগ ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তারা দেখছে, এসব যন্ত্রপাতি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের একেকটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। দীর্ঘ ছুটিতে সাধারণত আমরা যান্ত্রিক ব্যস্ততা ও নিয়মতান্ত্রিকতাকে ছুটি দিই। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। একটানা বন্ধে প্রায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার প্রতি অবহেলা জন্মে। ঝোঁক থাকে খেলাধুলা ও বেড়ানোর দিকে। আর অপেক্ষাকৃত কম সচেতন অভিভাবকরাও এ সময়টা তাদের সন্তানদের পড়ালেখার প্রতি উদাসীন। কিন্তু অনলাইন ক্লাস চিরন্তন সব ধারা ও অভ্যাসের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, চলমান অনিশ্চিত সময়ে অবরুদ্ধ মানুষের মানসিকতায় অবসাদ ভর করছিল। প্রাপ্তবয়স্করা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেও শিক্ষার্থীদের সে ক্ষমতা নেই। বিদ্যালয়ের চিরচেনা পরিবেশের অনুপস্থিতির পাশাপাশি ঘরের বাইরে যাওয়ার বিধিনিষেধের চাপে দিনের পর দিন অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের মনে চাপ বাড়ছিল। মানসিক বিকাশের পথ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার শঙ্কা ছিল প্রবল। কিন্তু টিভিও অনলাইন ক্লাস তাদের চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বল্প পরিসরে হলেও তারা পড়ালেখায় ব্যস্ত হয়। পাশাপাশি চলমান দুর্যোগে তাদের করণীয় সম্পর্কে শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মিত তথ্য পাওয়ার  সঙ্গে  সঙ্গে বজায় থাকছে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কও।

পক্ষান্তরে, অনলাইন ক্লাসের অসুবিধাগুলোও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক পরিবারে টিভি সেট নেই বা থাকলেও কেব্ল সংযোগ নেই। এর ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থীই টিভির পাঠ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। উচ্চ স্তরে অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ না থাকায় তাদেরও অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনা যায়নি। টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সাধারণ ছুটির কারণে লাখ লাখ পরিবার আর্থিক মন্দার শিকার। কাজ হারিয়েছেন অনানুষ্ঠানিক খাতের কয়েক লাখ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে চাপ বাড়ে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত এসব পরিবারের সন্তানদের কাছে অনলাইন ক্লাস গরিবের ঘোড়া রোগের সমতুল্য। এক বাবা হালের গরু বিক্রি করে তার সন্তানকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। আবার ক্লাস করতে মোবাইল কিনে না দেওয়ায় দু-একজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। তাই আমাদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে চলমান ডিজিটাল মাধ্যমের পাঠদান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়া কতটা রোধ করা সম্ভব হবে তা যথেষ্টই ভাবনার বিষয়।

একদিকে অভাব এবং অন্যদিকে ঘরে বসে ক্লাসের সহজ সুযোগ থাকায় যেসব কোমলমতি শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের মনে প্রচণ্ড হতাশার জন্ম হওয়া স্বাভাবিক। তাদের অপ্রত্যাশিত মানসিক হতাশার চিকিৎসা করবে কে? এ তো গেল সামর্থ্যহীনদের কথা। যাদের সামর্থ্য আছে তারাও কি ভার্চুয়াল ক্লাসের পূর্ণ উপযোগিতা গ্রহণ করতে পারছে? এক্ষেত্রে দায় বর্তায় দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ওপর। প্রান্তিক জেলাগুলোর অনেক জায়গায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল বলে অনেকেই নিরবচ্ছিন্নভাবে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত থাকতে পারছে না। আবার একই পরিমাণ ডেটার মূল্য ও মেয়াদ কোম্পানিভেদে আলাদা এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের পর অব্যবহƒত ডেটা ব্যবহার করার সুযোগ নেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি বা খণ্ডকালীন কোনো কাজ করে পড়ালেখার ব্যয় নির্বাহ করে। করোনার জন্য সবই বন্ধ থাকায় তাদের সম্পূর্ণভাবে পরিবারের আয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। কিন্তু ডেটা প্যাকেজের উচ্চ মূল্য অনলাইন ক্লাসের প্রতি তাদের নিরুৎসাহিত করছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে চলমান কার্যক্রমের গতিশীলতায়। শ্রেণির শিখন-শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে একসঙ্গে সক্রিয় থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের শেখার ধরনও আলাদা। প্রশ্ন করতে না পারলে এবং পাঠসংশ্লিষ্ট উপকরণ ব্যবহার না হলে শিক্ষার্থীদের বোধগম্যতা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। টিভি বা রেডিওর পাঠদানে স্বভাবতই সুযোগ দুটি নেই।

অনলাইনেও যে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে পারছে তাও নয়। এর মূল কারণ ক্লাসের সীমিত সময়। নির্ধারিত সময়ে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকের পাঠ উপস্থাপনের পর শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সময় খুবই কম। টিভির পাঠে ২০ মিনিটে এবং রেডিওর পাঠে ১০ মিনিটে শিক্ষক তার পাঠ শেষ করছেন। শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে নীরব দর্শক মাত্র। আবার টিভিতে পাঠ সকাল ৯টা থেকে শুরু হলেও রেডিওতে পাঠ সম্প্রচার করা হচ্ছে বিকালে। সময়টা ছোটদের খেলার সময়। তাই ক্লাসের ব্যাপ্তি ও সম্প্রচারের সময় বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছে, তা ভাবার বিষয়। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত না হলে পড়ালেখা জোর করে গেলানো ওষুধের মতোই। কথাটা বলার কারণ, অনলাইন ক্লাসে একটানা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রাখতে হয়। স্পষ্ট শব্দ শুনতে কানে ইয়ার ফোন বা হেড ফোনও রাখতে হয় লম্বা সময়। আবার বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট, নোট ও গবেষণাকর্ম করতেও ব্যবহার করতে হয় মোবাইল বা ল্যাপটপ। সব মিলিয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে সংশ্লিষ্ট সবার চোখ, কান ও মস্তিষ্কের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। সময় ও কাজ দীর্ঘায়িত হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন একাধিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক।

প্রযুক্তির ভালো ও মন্দ দুটি দিক থাকার ব্যাপারটি সর্বজনবিদিত। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রেও এটিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ যন্ত্রনির্ভর পড়ালেখা আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি অভূতপূর্ব ও যুগোপযোগী ধারণার পরীক্ষামূলক সূচনা বলা যায়। নানা সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়ে কঠিন ক্রান্তিকালেও স্বল্প পরিসরে পড়ালেখাটা হচ্ছে, এটাই অন্যতম প্রাপ্তি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাসগুলোর ব্যাপ্তি কিছুটা বাড়িয়ে বিটিভিতে প্রচার করা গেলে আরও অনেক শিক্ষার্থী সুবিধা ভোগ করতে পারত। মোটাদাগে ডিজিটাল পাঠের সুফল পেতে হলে অনলাইন প্ল্যাটফরমের পরিসর বাড়াতে হবে। অন্যথায় সামর্থ্যবান পরিবারের শিক্ষার্থীরা লাভবান হলেও বঞ্চিত থাকবে প্রান্তিক পর্যায়ের গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ এবং শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট নয়। কেবল সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের ওপর দায় চাপিয়ে সফলতার আশা করা নিরর্থক। দেশব্যাপী মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সেবা শক্তিশালী করার পাশাপাশি ডেটার মূল্য কমাতে হবে। বাড়াতে হবে প্যাকেজের মেয়াদ। এছাড়া অনলাইন পাঠকে বিস্তৃত ও স্থায়ী করতে হলে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের দাম সবার সাধ্যের মধ্যে আনতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর মাধ্যমে শিক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে পারলে মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুগোপযোগী পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টা।

শিক্ষক ও ফ্রিল্যান্স লেখক