বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম এবং খুবই উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পর্যায় শেষে শিক্ষার্থীদের এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়, সেটি হলো জাতীয় কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান অনেকটা উঁচুতে। স্বল্প খরচে ভালো মানের সুবিধা সেখানে বিরাজমান। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের অন্যতম এবং সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে প্রচুর শ্রম দিয়ে থাকে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অমনোযোগী থাকলেও ভর্তি পরীক্ষার বিরতিতে কঠোর শ্রম দিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ভালোভাবে মেধার বিকাশ করতে সক্ষম হয়।
সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারি কভিড-১৯-এর ভয়াবহতার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি উদ্যোগ নেয়। কোনো ধরনের আশার আলো না পাওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। মাধ্যমিকের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে এইচএসসি’র মেধা মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সচেতন অভিভাবক সবাই অনেকটা চিন্তিত। কেননা এই প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পুরোপুরি নতুন একটি ধারণা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় নেটওয়ার্কে বিরাজ করছে দুরবস্থা। অনেক শিক্ষার্থীর নেই মুঠোফোন। এছাড়া সারা দেশে একযোগে পরীক্ষা হলে সার্ভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী মেধাবী হলেও টেকনোলজির দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে, যার ফলে এর সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার ওপর আলাদা একটি মানসিক চাপ পড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ওপর কোনো শিক্ষার্থীর পরবর্তী জীবনের সফলতা অনেকাংশেই নির্ভরশীল। শিক্ষাবিদরা বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় যে যত ভালো অবস্থানে যেতে পারে, স্বাভাবিকভাবে তার পরবর্তী জীবনের সফলতা ততটা সহজ ও দ্রুতগামী হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের খুবই মনোযোগী এবং কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা যায়।
তাই আগে খারাপ ফলাফল করলেও অনেকে নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সক্ষম হয়।
তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পুরোপুরি নতুন। যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি, যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্যান্য অসুবিধা দেখা দিলে একটি মেধাবী শিক্ষার্থী ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আর তাই কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে ভালো করে ভেবেচিন্তে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ও নিরাপদ হয়, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
মামুন হোসেন আগুন
ঢাকা কলেজ, ঢাকা