Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:44 am

অনির্দিষ্টকালের জন্য জাহাজ ভাঙা বন্ধ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে সরকার ২১ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সময়ে অতি প্রয়োজনী উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব ধরনের বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। যদিও সাধারণ ছুটি শুরুর আগে থেকেই মন্দার ছোয়া লাগে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে। সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আমদানিকৃত জাহাজ ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হতো। আবার বেশকিছু জাহাজ কাটা বন্ধের নিদের্শনা দেয় মন্ত্রণালয়। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণার দুই সপ্তাহ পর এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য জাহাজ ভাঙা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশন। মূলত শ্রমিকরে সুরক্ষা ও স্ক্র্যাপের চাহিদা না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনার প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষতি পোষাতে ৩৭৫ কোটি টাকা প্রণোদনা দাবি করেছেন ইয়ার্ড মালিকরা।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় বর্তমানে ৬০টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড সচল রয়েছে। এসব ইয়ার্ডে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গত কয়েকদিনে স্ক্র্যাব বিক্রয় নেমে এসেছে শূণ্যের কোটায়। এ সময়ে ইয়ার্ডগুলোয় প্রায় ১৪ লাখ টনেরও বেশি স্ক্র্যাপ অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় চার হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এ খাতে বিনিয়োগের শতভাগ অর্থায়ন করেছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আর বিনিয়োগের বিপরীতে ৯ শতাংশ হারে চলতি মাসের সুদ আসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। আবার ৬০ ইয়ার্ডে ৭০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর মাসিক বেতন-ভাতা আসে ৩০ কোটি টাকা। আর ইয়ার্ডগুলোর সংস্থাপন ও অন্যান্য খাতে মাসিক ব্যয় ৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ইয়ার্ডগুলোর মাসিক খরচ প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এছাড়া করোনার কারণে টন প্রতি দরপতন হচ্ছে দুই হাজার টাকা। অর্থাৎ জমাকৃত ১৪ লাখ টনে মোট দরপতন হয়েছে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা। সবমিলে চলমান সাধারণ ছুটিকালে এ খাতে ৩৭৫ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা প্রকাশ করেন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে সভাপতি আবু তাহের স্বাক্ষরিত চিঠিতে করোনাকে কেন্দ্র কওে এ শিল্পে ৩৭৫ কোটি টাকা প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানান। আর এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া ৯ শতাংশ সুদ এবং প্রণোদনার জন্য বিতরণকৃত টাকার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ নিশ্চিত করা জন্য আবেদন জানানো হয়।

On the right, some workers are taking some acetylene bottles to the ship (to feed the blowtorches). On the left, a row of men is pulling a thick steel-made cable that will be used to get some ship parts closer to the beach with a winch. They have to go there through low tide. It is common that they get some wounds with pieces of steel or glass present in the mud.

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দিয়ে দেশের স্ক্র্যাপ জাহাজ ব্যবসায়ীরা ২৩৩টি পুরনো জাহাজ আমদানি করেছিলেন। ৬২ প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত জাহাজগুলোর মোট ব্যয় ছিল নয় হাজার ৭৯ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৪ টাকা। এতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ রাজস্ব পায় ৩৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এরমধ্যে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসএন করপোরেশন ছিল সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরাতন জাহাজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ভাঙার জন্য ২১টি জাহাজ আমদানি করে। এগুলোর আমদানি ব্যয় ছিল এক হাজার ২৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৮৬ টাকা।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, ৬০-এর দশকে সীতাকুন্ডে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সূচনা করেন। বর্তমানে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প। এ শিল্প থেকে দেশের রি-রোলিং মিলে কাচাঁমাল হিসেবে স্ক্র্যাপের যোগান দেওয়া হয় ৩০ হতে ৩৫ লাখ টন। এ সরবরাহকৃত স্ক্র্যাপ হতে রড উৎপাদন করে শতাধিক স্টীল মিল ও রি-রোলিং মিল। দেশের মোট ইস্পাতের চাহিদার ৭৫ শতাংশই পূরণ করা হয় পুরনো জাহাজ পুন-প্রক্রিয়াজাতকরণ করে। এ খাত থেকে সরকার সব ধরণের শুল্ক ও আয়কর বাবদ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে। এ খাতের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যদিও কয়েকদিনের করোনার ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের কঠিন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের একটি ইয়ার্ডে গড়ে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থা কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে আমাদের দেউলিয়া হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও একাধিক শিপইয়ার্ডে মালিক কামাল আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, আগে টনপ্রতি স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা। আর বন্ধের আগের দিন ছিল ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা। অনেক দরপতন হয়েছে। তবে বিক্রি বন্ধ হয়নি। এ ব্যবসায় আমার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। অনেক লোকসান হচ্ছে। শুধু আমরা না সব ইয়ার্ড মালিকের একই অবস্থা। কি হবে, কোথায় গিয়ে থামবে- কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না। এরমধ্যে সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আর নীতিমালা প্রকাশ হলে বোঝা যাবে কি পরিমাণ প্রণোদনা পাব। তিনি আরো বলেন, দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি, শ্রমিক সুরক্ষা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে আমাদের ইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ কাটা অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।