অনিয়মের দায়ে উত্তরা ফাইন্যান্সের এমডিকে অপসারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিয়মের দায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ বিষয়ে উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। গতকাল থেকেই এই অপসারণ কার্যকর হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেয়া অপসারণের চিঠিতে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ২০(৩) ধারার আওতায় উত্তরা ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে বিশেষ নিরীক্ষা সম্পাদনের জন্য নিযুক্ত সিএ ফার্ম রহমান রহমান হক (কেপিএমজি) করা বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটিতে সংঘটিত ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থেকে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে ২৩ জুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার করতে নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে আরেফিন জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এসব বিষয়ে জানতে উত্তরা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম শামসুল আরেফিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রসঙ্গত, বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে বেসরকারি খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স। অনুমোদন ছাড়াই ঋণ নিয়েছে পরিচালকরা। নামে বেনামে করেছে অর্থ আত্মসাৎ। ঋণ-আমানতের তথ্যে রয়েছে গরমিল। বারবার সতর্ক করার পরও টনক নড়েনি। নানা অজুহাত দেখিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন দিতে কালক্ষেপণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। পরে বাধ্য হয়ে অনিয়ম খুঁজে বের করতে উত্তরা ফাইন্যান্সে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে ২০১৮ সালে তিন গ্রাহকের ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) ভুল তথ্য পাঠিয়েছিল উত্তরা ফাইন্যান্স। পরে ওই তিন গ্রাহককে ঋণ দিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ভুল তথ্য দেয়ায় অপরাধে উত্তরা ফাইন্যান্সকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে জরিমানা মওকুফ চেয়ে আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে উত্তরা ফাইন্যান্সের কেলেঙ্কারির প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক পরিচালকে ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়েই নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনেক লেনদেনের তথ্য গোপন করতে নথিপত্রও গায়েব করে ফেলেছে। এসব অনিয়মের কারণে উত্তরা ফাইন্যান্সের ২০১৯ ও ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদন সংশোধনের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স ১৯৯৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পায়। আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ১ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা ও ঋণ ৩ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। আলোচিত বছরে উত্তরা ফাইন্যান্সের গ্রাহক ছিল ২ হাজার ৫৩৩ জন।

উত্তরা ফাইন্যান্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। সবশেষ ৩১ জানুয়ারি ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানকি বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৩৫ দশমিক ০২ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে রয়েছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া বাকি ১২ দশমিক ৭২ দেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০