অনিয়ম-দুর্নীতি আড়ালের চেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যাংক!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গত দেড় দশক ধরে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। এ সময় তিনজন গভর্নর দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বর্তমান গভর্নর এসব সংবাদ আড়াল করার চেষ্টায় রয়েছেন। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা গত এক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগের মতো প্রবেশ করতে পারছেন না।

এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সংগঠন নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হলেও, তা ফলপ্রসূ হয়নি।

গতকাল অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সময় ক্ষুদ্ধ সাংবাদিকরা বলেন, আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন সাংবাদিকরা পাস ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকের শুধু নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। এর বাইরে অন্য কোথাও বা কোনো কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন না। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এর আগেও পাস ইস্যুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে হতো। তবে ভেতরে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

তারা আরও বলেন, সম্প্রতি কিছু ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। ভবিষ্যতে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর গণমাধ্যম থেকে আড়ালে রাখতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর আগে কখনও এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

এদিকে বিষয়টি সমাধানে গতকাল বেলা ১১টার দিকে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতেও কোনো সমাধান হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্টারদের নির্বিঘœ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ইআরএফ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে রিপোর্টারদের আগের মতো বাধাহীনভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার কাছে যাতায়াতের অধিকার বৃহস্পতিবার থেকেই নিশ্চিত করতে গভর্নরকে জোরালোভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইআরএফের একমাত্র দাবি অনুযায়ী বরাবরের মতো রিপোর্টারদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গভর্নর। ‘তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চান, ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে পাস নিয়ে ঢুকতে হবে।’

ইআরএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৫৩ বছর ধরে রিপোর্টাররা অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে কখনও তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। হঠাৎ করে রিপোর্টারদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় ব্যাংক খাত নিয়ে ভুল রিপোর্টিং হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়।

সার্বিক পরিস্থিতিতে রিপোর্টারদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ইআরএফের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইআরএফ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো তারা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।’

এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাংবাদিকতা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত পেশা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করা ও তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। জনগণ সাংবাদিকদের মাধ্যমেই তথ্য জেনে থাকে। এখন গভর্নর কি লুকাতে চাচ্ছেন?’

তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা সবখানেই প্রয়োজন। সুশাসনের বিপরীত হয় এমন কোনো পদক্ষেপ কাম্য নয়। সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দেয়া অগ্রহণযোগ্য, এর অবসান হওয়া দরকার।’

প্রসঙ্গত, গভর্নর হিসেবে বৈশ্বিক একটি র?্যাঙ্কিংয়ে ‘ডি গ্রেড’ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গেøাবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিনের র?্যাঙ্কিংয়ে তিনি ‘ডি’ গ্রেড পান।

একই র?্যাঙ্কিংয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস পেয়েছেন ‘এ প্লাস’ গ্রেড। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ভীরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ মাইনাস’ ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমেদ পেয়েছেন ‘সি মাইনাস’।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০