অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে ওয়াসার আয় বাড়ান

বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বড় বিপাকে আছে সাধারণ মানুষ। মহামারি কভিডের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর কয়েক দফা নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। একদিকে কাজ হারানো শ্রমজীবীরা সবাই কাজ পাননি, আবার যারা পেয়েছেন তারাও আগের নিয়মে বেতন পাচ্ছেন না। সঞ্চয় যা ছিল, কর্মহীন থাকাকালে তা খরচ করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। কভিডকালে সবাইকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনাও সম্ভব হয়নি। তাই রাষ্ট্রীয় কোনো সেবামূল্য বাড়াতে ভোক্তাসাধারণের দুঃখ-কষ্টের বাস্তবতা বিবেচনায় নেয়া জরুরি।

গতকাল নতুন করে দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ঢাকা ওয়াসা। কভিডকালে এরই মধ্যে দুই দফা দাম বাড়িয়েছে সংস্থাটি। ঢাকা ওয়াসা গত দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১৩ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৪ বার।

ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০ শতাংশ দাম বাড়ালেও আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি কিলোলিটার পানির জন্য দাম গুনতে হবে ১৮ টাকা ২১ পয়সা। আর একই হারে দাম বাড়লে বাণিজ্যিক গ্রাহককে প্রতি হাজার লিটারের জন্য ৫০ টাকা ৪০ পয়সা হারে পানির দাম পরিশোধ করতে হবে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ওয়াসা বোর্ড পানির দাম বার্ষিক পাঁচ শতাংশ হারে বাড়াতে পারে। এর বেশি বাড়ানো কিংবা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের অর্থ জোগান দেয় জনগণ। এখন কভিডকালে ভোগান্তি বিবেচনায় অন্তত তিন বছর ভর্তুকি দিয়ে হলেও পানির দাম না বাড়ানো উচিত। ওয়াসার এমডির ভাষ্য, সরকার বলছে, ভর্তুকি দরিদ্র মানুষের জন্য। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। তাই সরকারকে প্রস্তাব করা হয়েছে চার ভাগেÑ১০০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ, ৪০ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ ভাগ দাম বাড়ানোর।

কিন্তু কীভাবে শ্রেণিকরণ করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। যারা পানির শতভাগ দাম দেবেন, তারা কি রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাসিন্দা। এই শ্রেণিবিন্যাস জটিল বিষয়। এর চেয়ে পানির অপচয় বন্ধ করা সহজ বিষয়। প্রিপেইড মিটার বসানো গেলে পানির অপচয় কমমে। তখন হয়তো দামও বাড়াতে হবে না।

পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক, বা ওয়াসার প্রস্তাব গ্রাহক নির্যাতনমূলক কি না, এসব নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের সক্ষমতা বিবেচনায় পানির দাম না বাড়ানোই হবে যুক্তিযুক্ত।

সবাই স্বীকার করবেন, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে ওয়াসার সিস্টেম লস কমবে, মুনাফা বাড়বে এবং পানির দাম বেশি বাড়াতে হবে না। সময়ের পরিক্রমায় ব্যয় সংকুলানে অবশ্যই অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। দাম বাড়ানো হলো সর্বশেষ পদ্ধতি। তার আগে ক্রয় প্রক্রিয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও গ্রাহক পর্যায়ের মিটার রিডিংসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করলে আয় বাড়বে। জনস্বার্থে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে ওয়াসার আয় বাড়াতে হবে, পানির দাম বাড়িয়ে নয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০