অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে নিহত এক হাজার ৪৩২ শ্রমিক 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ২০২৩ সালে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন খাতে এক হাজার ৪৩২ শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৫০২ জন। আগের বছর ২০২২ সালে নিহত ৯৬৭ হয়েছিলেন জন এবং আহত হয়েছিলেন ২২৮ জন। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় নিহত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬৫ এবং আহত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ২৭৪।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) কর্তৃক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এসএম মোর্শেদ জানান, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৩২৯ ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২৭৭ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ১০৩ ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২২৫।

খাতভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১২৭ জন, ২২০ দিনমজুর নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন ৭৬ জন, নির্মাণ খাতে নিহত ১৪৯ জন এবং আহত ৭২ জন, কৃষিশ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৬ জন, আহত হয়েছেন ১০ জন (যাদের মধ্যে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৭১ জন), পোশাকশিল্পে নিহত ৬৪ জন ও আহত ৮৯ জন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নিহত ৯৪ জন ও আহত ১৫ জন, মৎস্য খাতে নিহত ৫৩ জন ও আহত ২২ জন, সেবা খাতে নিহত ২৬ জন ও আহত ২২ জন, সিরামিক খাতে নিহত ১৭ জন ও আহত ৯ জন, চামড়াশিল্পে নিহত চারজন ও আহত ১৭ জন, ইটভাটা/ব্রিকফিল্ডে নিহত ১১ জন ও আহত ৬ জন, জাহাজভাঙা/শিপব্রেকিংয়ে নিহত সাতজন ও আহত ২৯ জন, চা শ্রমিক নিহত একজন ও আহত ছয়জন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিহত তিনজন ও আহত দুজন।

ওশির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবহন খাতে নিহত হয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক। ২০২৩ সালে এ খাতে নিহত হয়েছেন ৬৩৭ জন ও আহত হয়েছেন ১২৭ জন। ২০২২ সালে এ খাতে নিহত হয়েছেন ১০৫ জন ও আহত হয়েছেন ২৯ জন।

প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থেকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন এবং দেয়াল-ভবন-ছাদ ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮)’ এবং ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫’-তে উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ

ব্যবস্থা জোরদার করা, পোশাক খাতের মতো অন্য সেক্টরগুলোয়ও শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেইফটি কমিটি গঠন করে তোলা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে সংগঠনটি।

এছাড়া আহত শ্রমিকের পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা, শিল্প খাতের সব সেক্টরে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) চালু করা, সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডেটাবেইজ তৈরি করা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত অথবা আহত শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা।

এছাড়া কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা, ২০১৩’ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাকি রিজওয়ানা, কো-ম্যানেজমেন্ট অফিসার নুসরাত জাহানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০