অনিরাময়যোগ্য একটি জটিল রোগ

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর: প্রাথমিক অবস্থায় রোগটির লক্ষণ ধরা পড়ার সুযোগ কম। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো লক্ষণ ছাড়াই অনেক বছর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। এমনকি এর নিরাময়ও সম্ভব নয়। রোগটির নাম লিভার সিরোসিস।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লিভারের গঠন পরিবর্তন হয়ে যায়। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক লিভার কংগ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ সালে সারা বিশ্বে দশ লাখেরও বেশি মানুষ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ২০১৩ সালে শুধু ইউরোপে এ রোগের কারণে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। অনেক ক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সারের জন্য এ রোগকেই দায়ী করা হয়।

কারণ

নানা দেশে লিভার সিরোসিসের ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন ইউরোপ কিংবা আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোত মাত্রাতিরিক্ত মদপানকে লিভার সিরোসিসের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দীর্ঘদিন মদ পানের অভ্যাস, যকৃতে চর্বি জমা, জেনেটিক কিছু সমস্যা আর কিছু ইমিউন সিস্টেমের জটিলতা থেকে লিভার সিরোসিস হতে দেখা হয়। তবে বিশ্বজুড়ে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমণকে অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। সবক্ষেত্রে এ সংক্রমণ সিরোসিসে পরিণত নাও হতে পারে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হেপাটাইটিস ‘বি’ পজিটিভ রোগীর পাঁচ থেকে ২০ বছর পর লিভার সিরোসিস হতে পারে। হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে এ হার অনেক বেশি। এছাড়া কিছু জš§গত অসুখের কারণে রোগটি হতে পারে। যেমন উইলসন ডিজিজ, হেমোক্রোমেটাসিস প্রভৃতি। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্তদেরই লিভার সিরোসিস হয়।

প্রাথমিক উপসর্গ

লিভার সিরোসিস হলে সাধারণত যকৃতের আকারে পরিবর্তন ঘটে। যা আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। লিভারে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ফলে ফাইব্রোসিস ও নুডিউল বা গোটা তৈরি হয়। এটাই মূলত লিভার সিরোসিস নামে পরিচিত। সাধারণত খাবারে অরুচি, ওজন হ্রাস, বমি ভাব বা বমি, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, শরীরে পানি আসা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। পরে যকৃতের অকার্যকারিতার সঙ্গে কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়ে। রক্তে আমিষ ও লবণে অসামঞ্জস্য দেখা যায়। তাছাড়া জন্ডিসও এ রোগের একটি অন্যতম উপসর্গ। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কথাবার্তায় এলোমেলো ভাব দেখা যায়। একে সিরোসিসের শেষ স্তর হিসেবে ধরা হয়।

যেভাবে নিশ্চিত হবেন

লিভারে কোনো ধরনের ব্যথা কিংবা সমস্যা দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আলট্রাসনোগ্রাম করে যদি লিভারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তবে সিরোসিস আছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়। রক্ত ও আনুষঙ্গিক কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে সিরোসিস আছে কিনা তা নিশ্চিত করে থাকেন ডাক্তার। অনেক সময় পরীক্ষার পরও সিরোসিস ধরা পড়ে না। তখন রোগটি জটিলতর হয়। শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রতিরোধ

প্রতিষেধক না থাকায় প্রতিরোধই উত্তম। হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’-এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ত্যাগ করতে হবে। যেমন শিরায় নেশাদ্রব্য নেওয়া, অনিরাপদ রক্তগ্রহণ বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে কোয়াক বা হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে দন্ত চিকিৎসা করানো। হেপাটাইটিস সাধারণত মুখের লালা, বীর্য ও রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই রাস্তার পাশে ফেরি করে চলা কোয়াক ডেন্টিস্টের কাছে না যাওয়াই ভালো। হেপাটাইটিস প্রতিরোধে টিকা নিতে পারেন। অতিরিক্ত অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। দূষিত কোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশন করা যাবে না। দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালন প্রতিরোধ করুন। চুল বা দাড়ি কামানো অথবা যে কোনো কাটাকাটি বা সেলাইয়ের সময় বিষয়গুলো মাথায় রাখুন। মনে রাখা ভালো, রোগীর কাছ থেকে সরাসরি এ ভাইরাস সংক্রমণ হয় না। হেপাটাইটিসে সংক্রমণ হলে ঝাড়ফুঁক জাতীয় চিকিৎসা না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।

চিকিৎসা

এটি একটি জটিল রোগ। পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিশ্বে মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী পাঁচ বছরের বেশি বেঁচে থাকার আশা করতে পারেন। তবে লিভার প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। কাজটি প্রাথমিক অবস্থায় করতে পারলে ভালো। লিভার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ডিকমপেন্সেট অবস্থায় চলে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। বাংলাদেশেও লিভার প্রতিস্থাপন করা যায়।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন প্রোটিন জাতীয় খাবার ও ফলমূল খেতে হবে। কাঁচা লবণ খাওয়া কমাতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০