অনিশ্চয়তায় শেয়ার বিক্রয় প্রবণতা বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের

শেখ আবু তালেব: শেয়ারের দর নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। মিশ্র ধারার প্রবণতার মধ্যে পতনের সুরই আধিক্য রাখছে। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পারছে না দেশের প্রধান পুঁজিবাজার। পতন রোধে দুই শতাংশের সার্কিট ব্রেকারও কাজে লাগছে না। পুঁজি রক্ষায় লোকসান দিয়েও শেয়ার বিক্রয় শুরু করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এজন্য বিক্রয় চাপে আগের সপ্তাহের চেয়েও বেশি দরপতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। তথ্য বলছে, গত ৭ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৩টি সিকিউরিটিজ লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫১টির। অন্যদিকে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ ৩২৪টিরই দরপতন হয়েছে। অপরিবর্তিত ছিল ১০টির ও লেনদেনে অংশে নেয়নি আটটি।

এ সময় ডিএসইর সব সূচকের পতন হয়েছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১১৬ দশমিক ৬০ পয়েন্ট। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ কমেছে ২২ দশমকি ৪১ পয়েন্ট ও ডিএসইএস কমেছে ১৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন হারিয়েছে আট হাজার কোটি টাকা। এ সময় লেনদেন কমেছে আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৫ শতাংশ।

ডিএসইর লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে মাত্র দুটি সিমেন্ট ও প্রকৌশল খাতে ইতিবাচক দেখা গেছে। অবশিষ্ট সব খাতে আগের সপ্তাহের চেয়ে ঋণাত্মক প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ এ সপ্তাহে এসব খাতে লোকসান দেখতে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এর মধ্যে ওষুধ খাতে শূন্য দশমিক চার, ভ্রমণ শূন্য দশমিক আট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে এক দশমিক এক, মিউচুয়াল ফান্ডে এক দশমিক দুই, ব্যাংকে এক দশমিক তিন, টেলিকম খাতে এক দশমিক ছয়, খাদ্যে এক দশমিক ছয়, জ্বালানিতে দুই দশমিক এক, বস্ত্রে দুই দশমিক পাঁচ, জীবন বিমায় দুই দশমিক সাত, সেবা খাতে তিন দশমিক তিন, সিরামিকে তিন দশমিক ছয়, পাট খাতে সাড়ে চার, আইটি চার দশমিক সাত, ট্যানারি পাঁচ দশমিক তিন, সাধারণ বিমায় ছয় দশমিক ছয় ও কাগজে ছয় দশমিক ৯ শতাংশ লোকসান দেখতে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

আলোচিত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল প্রকৌশল খাতের শেয়ার। এজন্য ডিএসইর লেনদেনে একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক তিন শতাংশ অবদান রাখে খাতটি। এরপর রয়েছে বস্ত্র খাতে ১২, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১১ দশমিক সাত, ওষুধ খাত আট দশমিক দুই, ব্যাংক সাত ও খাদ্য পাঁচ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। বাজার কারসাজিদের তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রকাশ্যে আসলেও এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর সঙ্গে রয়েছে তারল্য সংকটের চাপ। সব মিলিয়ে পুঁজির নিরাপত্তা রক্ষাই তাদের কাছে এ মুহূর্তে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা কারসাজি চক্রের উপস্থিতি রয়েছেÑএমন শেয়ার বিক্রয় শুরু করেছেন। ফলে বাজারে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিক্রয় চাপে পড়ে গেছে সিংহভাগ শেয়ারের দর। এর মধ্যে অনেকে মৌলভিত্তির শেয়ারে নজর রেখেছেন। হাতে থাকা শেয়ার বিক্রয় করে এসব শেয়ার ক্রয় করছেন।

একদিকে বাজারের ওপর তীক্ষè নজর ও অন্যদিকে সতর্ক লেনদেনে বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে চলে গেছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও তারল্য সংগ্রহে নেমে পড়েছেন। সামনের ঈদে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ও আনুষঙ্গিক খরচ সামলাতে এখন থেকেই নগদ অর্থের সংস্থান শুরু করেছেন। এটি করতে গিয়ে মার্জিন লোন কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি শেয়ার বিক্রয় শুরু করেছে। এত চাপ সামলাতে না পেরে ধীরে ধীরে পতন ঘটছে পুঁজিবাজারের।

একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে জেমএমআই হসপিটাল রিকুজিট ম্যানুফ্যাকচারিং। এরপর রয়েছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-০১, মোজাফফার হোসেইন স্পিনিং মিলস ও বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস। অন্যদিকে এই সময়ে দর হারানোর শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে উত্তরা ব্যাংক, ফরচুন শুজ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০