সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড়: পঞ্চগড় থেকে রাজধানী হয়ে সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ আরও সহজতর করার জন্য দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হয়েছে। গত বছরের ১৭ জুন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক পঞ্চগড়-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে একজোড়া ব্রডগেজ শাটল ট্রেন উদ্বোধন করে বলেছিলেন, কিছুদিনের মধ্যে পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হবে। কিন্তু ১৩ মাসেও সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে জেলাবাসী।
পঞ্চগড় থেকে রাজধানী হয়ে সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগের জন্য মিটারগেজ লাইন হওয়ায় পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে সরাসরি ট্রেন চলাচল করছিল না। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলাবাসীর দাবির মুখে ২০১১ সালে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তরসহ লাইন ও স্টেশন আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর গত বছরের ১৭ জুন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক পঞ্চগড়-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে একজোড়া ব্রডগেজ শাটল ট্রেন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, কিছুদিনের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন ৫০ কোচ এলে পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হবে। কিন্তু ১৩ মাস পেরিয়ে গেলেও পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
এদিকে ব্রডগেজ শাটল ট্রেন উদ্বোধনের দিন থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার ঢাকাগামী যাত্রীরা দিনাজপুর থেকে একতা এক্সপ্রেসে ঢাকা যেতে পারছেন; তবে সরাসরি নয়। পঞ্চগড় থেকে শাটল ট্রেনে দিনাজপুর গিয়ে চড়তে হচ্ছে একতা এক্সপ্রেসে। এতে অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। একতা এক্সপ্রেসের জন্য পঞ্চগড় থেকে ৩৫ আসনের বরাদ্দ থাকলেও কোটার কারণে অর্ধেকের কম আসন পান সাধারণ যাত্রীরা।
পঞ্চগড় রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়-পার্বতীপুর রুটটি ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত হওয়ার পর এ স্টেশন থেকে প্রতিদিন চারটি ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে সকাল ৯টায় শান্তাহারের উদ্দেশে পঞ্চগড় ছেড়ে যায় সেভেন আপ নামের একটি ট্রেন। দুপুর ১টায় পার্বতীপুরের উদ্দেশে পঞ্চগড় ছাড়ে কাঞ্চন এক্সপ্রেস। এ দুই জেলার জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ডেমো ট্রেনটি পঞ্চগড়-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করে সপ্তাহে ছয় দিন। সোমবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পঞ্চগড় ছেড়ে যায় ট্রেনটি। আর দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেসের কানেক্টিং হিসেবে একটি শাটল ট্রেন পঞ্চগড় ছেড়ে যায় রাত ৮টায়। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা রাত ১০টার মধ্যে দিনাজপুর পৌঁছান এই ট্রেনে।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতযান এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি ভোর সাড়ে ৪টায় দিনাজপুরে পৌঁছায়। ঢাকা থেকে আসা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের যাত্রীদের নিয়ে শাটল ট্রেনটি ভোর ৫টায় পঞ্চগড়ের উদ্দেশে দিনাজপুর রেলস্টেশন ত্যাগ করে। এ ট্রেনটি সকালে পঞ্চগড়ে আসার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পঞ্চগড় রেলস্টেশনে অলস পড়ে থাকে।
পঞ্চগড় থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য একতা এক্সপ্রেসের শোভন শ্রেণির ৩৫টি সিট বরাদ্দ রয়েছে। টিকিটের মূল্য ৫৫০ টাকা। অথচ পঞ্চগড়-ঢাকা চলাচলকারী ভালোমানের দিবা ও নৈশ কোচের টিকিটের মূল্য ৬৫০ টাকা। এ কারণে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে ট্রেনে ঢাকা যেতে আগ্রহী। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ, তারা যাত্রার কয়েকদিন আগে গিয়েও টিকিট পাচ্ছেন না। তাদের মতে, এমপি, ডিসি অফিস ও এসপি অফিসের জন্য নির্ধারিত কোটার কারণে সাধারণ যাত্রীরা ১৫টি সিটও পান না।
রেলস্টেশনের পাশের ঘাটিয়ারপাড়ার শিক্ষক মাসুদ পারভেজ হিটলার জানান, একতা এক্সপ্রেসে পঞ্চগড়ের জন্য কমপক্ষে ১০০ সিট প্রয়োজন। কিন্তু তারা পাচ্ছেন মাত্র ৩৫টি। বিভিন্ন কোটার কারণে অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দিবা ও নৈশ কোচে ঢাকা যান। তাই দুই জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, সরাসরি পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হোক।
পঞ্চগড় স্টেশন মাস্টার বজলুর রহমান জানান, গত বছরের ১৭ জুন থেকে শাটল ট্রেনের মাধ্যমে পঞ্চগড়-ঢাকা রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। তবে পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে কতদিনের মধ্যে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবেÑএ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কোটার বিষয়ে তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত কোনো কোটার চিঠি তার কাছে নেই। তবে এমপি, ডিসি-এসপি স্যাররা আগে বলে রাখলে তাদের জন্য সিট রাখা হয়। সিট সংকটের কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। পঞ্চগড়-ঢাকা সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।
অনিশ্চয়তায় পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল
