মেহেদী হাসান: ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে ব্যাংকের ৪৯টি শাখার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি। বছরের পর বছর গুনছে লোকসান। বর্তমানে ব্যাংকটির ১৪৮টি শাখা লোকসানি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ব্যাংকটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কৃষকের টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন কৃষি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা। ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪৪৭টি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির অর্থের স্থিতি ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র দুই লাখ টাকা। বাকি অর্থ যোগসাজশের মাধ্যমে কিছু কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোথাও কোথাও এমন অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনা ঘটে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটে এমন কোনো জালিয়াতির ঘটনা উঠে এলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।’
এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চলতি বছরের জুন শেষে বিশেষায়িত খাতের এ ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের জুনে যার পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় চার হাজার ৩১৬ কোটি টাকা আর প্রভিশন ঘাটতি ৯৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটির নিট লোকসানের পরিমাণ ৯৮১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এছাড়া এক হাজার ৩১ শাখার মধ্যে ১৪৮টি লোকসানি শাখা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক আরেকটি পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে লোকসানও কম দেখিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। একই সঙ্গে ৩৯৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি ও চাতুরী বিন্যাসের মাধ্যমে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় দেখানো হয়েছে বলে প্রধান কার্যালয়সহ ৪৩টি শাখার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে। ফলে নিট লোকসান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শিত ৪৩টি শাখা বাদে অন্য সব শাখার প্রভিশন ও আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব বিবেচনায় নিয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের স্থিতিভিত্তিক আর্থিক বিবরণী সংশোধন করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগকে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কৃষি ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকের মোট লোকসানের পরিমাণ ৫৮৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আলোচ্য সময়ে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৯৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লোকসানের সঙ্গে সমন্বয় করলে কৃষি ব্যাংকের নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর সঙ্গে চাতুরীর মাধ্যমে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বেশি আয় দেখানো হয়েছে। ফলে ব্যাংকটির নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
জালিয়াতির মাধ্যমে লোকসান কম দেখানোর বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘লোকসান কম দেখানো হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। কোথাও কোথাও এমন কিছু ঘটতে পারে। তবে সার্বিকভাবে আমাদের ব্যাংকে লোকসান আগের তুলনায় কমেছে। গতবার লোকসানের পরিমাণ ছিল ৬৭৪ কোটি টাকা। এ বছর লোকসান হয়েছে ৫৩০ কোটি টাকা।’
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১৮২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা; মোট কর্জের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৮৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা; বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল চার কোটি ছয় লাখ টাকা। বিগত পরিদর্শন তারিখে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল চার কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগের তুলনায় বিনিয়োগ কমেছে ২০ লাখ টাকা।