Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:14 am

অনুগল্প: ঈদের পাঞ্জাবি

মেহেদী হাসান: তখন ১৫ রমজান শেষ হয়েছে। রাফির স্কুলও ছুটি। ছুটি হলে কী হবে আর… পড়ালেখার কি ছুটি আছে? এসএসসি পরীক্ষার মাত্র কয়েক মাস বাকি। তবু রাফির আনন্দ আর ধরছে না, কেননা যতই দিন যাচ্ছে ঈদ ঘনিয়ে আসছে।
রাফি, জনি ও বনি তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পড়ালেখায় জনি আর বনির চেয়ে রাফি তুলনামূলক এগিয়ে। ক্লাসের ফার্স্ট বয় রাফি। পড়ালেখায় একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাদের বন্ধন অটুট। একে অন্যের জন্য সবকিছু করতে পারে। ঈদে তিন বন্ধুর পরিকল্পনা হলো সবাই এক রঙের পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াবে। এজন্য নতুন পাঞ্জাবি কিনতে হবে।
পরিকল্পনা শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাফি পড়ল মহা টেনশনে। নতুন পাঞ্জাবি কেনার সামর্থ্য তার নেই। বাবা দিনমজুর। মা গৃহিণী। চার ভাইবোনোর সংসারে কোনোমতে দিন চলে তাদের। অন্যদিকে জনি ও বনিদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো। সময় গড়ায়। এদিকে ফিকে হয়ে আসছে রাফির আনন্দ। স্কুলও ছুটি। তাই বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও নেই কয়েক দিন ধরে।
রাফির বয়সী সব ছেলেমেয়েদের মাঝেই উৎসব আর উদ্দীপনা। ঈদ নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের কত রকম আনন্দ। এদিকে পাঞ্জাবি কেনার টাকা চাওয়ার সাহস পর্যন্ত করতে পারছে না রাফি। সে ভালো করেই জানে, তার বাবার পক্ষে নতুন পাঞ্জাবি কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। কিছুদিন আগেই টিফিন খরচ বাচানোর টাকা দিয়ে স্কুল ড্রেস বানিয়েছে রাফি।
ঈদের আর মাত্র দু’দিন বাকি। রাফির মনে আনন্দ নেই। সারা দিন ঘরে বসে থাকে সে। রাফির আম্মু এসে জানতে চাইলেন তার মন খারাপ কেন? তখন আম্মুকে সবকিছু জানাল রাফি। আম্মুরও কিছু করার নেই, কেননা দারিদ্র্যের কশাঘাতে পিষ্ট তাদের জীবন। যেখানে সংসার চালানো দায়, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করা বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে কীভাবে নতুন পাঞ্জাবি কিনে দেবেন আম্মু?
ঈদের চাঁদ উঠেছে। সবাই ঈদের চাঁদ দেখতে খেলার মাঠে গেছে। রাফিও তার ছোট বোনকে নিয়ে ঈদের চাঁদ দেখতে মাঠে গেছে। চারদিকে শিশু-কিশোরদের হই-হুল্লোড়। ঘরে ঘরে আনন্দ উল্লাস। দূর থেকে গানের সুর ভেসে আসছে… ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে…।’
ঈদের চাঁদ দেখে বাড়ি ফিরে যায় রাফি। জনি ও বনি তিনটি এক রঙের পাঞ্জাবি কিনে চাঁদরাতেই সোজা রাফির বাসায় চলে আসে। রাফি দুই প্রিয় বন্ধুকে বাসায় দেখে ভীষণ অবাক। তবে বন্ধুদের দেখে রাফির আনন্দ আর ধরছে না। আম্ম্ ুতাদের জন্য পায়েস রান্না করেছেন। সবাই একসঙ্গে মিলে খোশগল্পতে মেতে উঠল। এরপর জনি আর বনি রাফির জন্য কেনা পাঞ্জাবিটা তার হাতে তুলে দিল। রাফি তখন কী করবে বুঝতে পারছিল না। আনন্দে সে তার দুই বন্ধুকে জড়িয়ে ধরল। এই দৃশ্য দেখে আম্ম্রুও আনন্দ ধরছে না। জীবনে প্রথমবারের মতো রাফি এত বড় সারপ্রাইজ পেল।
জনি ও বনি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে, নতুন পাঞ্জাবি কেনার সামর্থ্য রাফির নেই। তাই তারা তাদের আব্বু-আম্মুকে বলে রাফির জন্য নতুন পাঞ্জাবি কেনে। তিনজনের বন্ধুত্বের এই নিদর্শন দেখে তাদের আব্বু-আম্মুরাও গর্ববোধ করেন।
ঈদের দিন সকালে তিন বন্ধু এক রঙের পাঞ্জাবি পরে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়ে। পরে সবাই মিলে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। এভাবেই রাফির ঈদকে আনন্দময় করে তুলল তার দুই প্রিয় বন্ধু জনি ও বনি। এর পর থেকে তিন বন্ধুর এই বন্ধন ছড়িয়ে পড়ে তাদের পরিবারগুলোর মধ্যেও। এক পরিবার অন্য পরিবারের সুখে-দুঃখে এগিয়ে আসে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে রাফিও তার দুই প্রিয় বন্ধুকে সবসময় সহযোগিতা করে। তিন বন্ধুই এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। একটি ঈদের পাঞ্জাবিই বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, আর সমতার মাধ্যমে কাছে এনেছে সবাইকে। ঈদ মোবারক!