অনুপ্রবেশে বাড়ছে রোহিঙ্গা সংকট

মাহমুদুল হক আনসারী: নাফ নদী হয়ে নতুন করে যেভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। সম্প্রতি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। মূলত মিয়ানমারের আরাকানে সামরিক এবং বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধির মধ্যে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। সরকারি হিসেবে গত দেড় মাসে নতুন এমন অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা আট হাজারেরও বেশি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাস্থবে নতুন করে ঢোকা রোহিঙ্গার সংখ্যা এর দ্বিগুণ। বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে আট লাখ রোহিঙ্গা ঢুকেছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে। সরকার অবশ্য বলছে, নতুন করে আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দেয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। যদিও মিয়ানমারে সংঘর্ষ চলতে থাকায় বাংলাদেশ যেন নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় সে বিষয়ে চাপ আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করতে পারবে কি-না সেটা একটা বড় প্রশ্ন। হঠাৎ কেন রোহিঙ্গারা ঢুকছে? মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম শিকদারপাড়া। সেখানকার বাসিন্দা জেসমিন মাসখানেক আগে এসেছেন বাংলাদেশে। সঙ্গে তার স্বামী ও এক সন্তানও এসেছে। বাংলাদেশে আসার পর তারা অবস্থান নিয়েছেন কক্সাজারের উখিয়ার কুতুবপালং ক্যাম্পে। জেসমিনের বক্তব্য অনুযায়ী, গত মাসে শিকদারপাড়ায় আরাকান আর্মির ছোড়া বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পর বাংলাদেশে না এসে আর কোনও উপায় ছিল না তাদের। বোমা তার ডান পায়ে আঘাত করার পর সেই পা কেটে ফেলতে হয় বলে জানাচ্ছেন জেসমিন। ‘দুপুরের দিকে আমি বাসাতেই ছিলাম। হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাই। তারপর আর কিছু মনে নেই।

কারণ আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমার ডান পা থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। মিয়ানমারে চিকিৎসার কোনও সুযোগ ছিল না। শুধু ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। আমার প্রাণ বাঁচাতে আমার স্বামী পরিবার নিয়ে বাংলাদেশ চলে আসতে বাধ্য হয়।’ জেসমিনের পরিবার নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। এখানে ঢোকার পর তার আশ্রয় হয় একটি আন্তর্জাতিক এনজিও’র হাসপাতোলে। জেসমিন বলেন, ‘মিয়ানমারে আমার ঠিকমতো চিকিৎসা হয়নি। ওই অবস্থাতেই একদিন পর বাংলাদেশে ঢুকি। এখানে চিকিৎসা চলতে থাকলেও পরে দেখা যায় ডান পায়ে আঘাতের জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে। পরে ইনফেকশনের কারণে আমার পা কাটতে হয়েছে। তবে পা হারালেও আমি বেঁচে আছি, আমার পরিবার বেঁচে আছে।’ জেসমিনের পরিবার বলছে, তারা আর মিয়ানমারে ফিরতে চাই না। সেনাবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন সামনে আসছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে? ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ কুড়ি বছর আগে যেভাবে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালিত হয়েছিল ১৭ অক্টোবর ২০২২ সালে।

মিয়ানমারে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। মিয়ানমারে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে; সীমান্ত পেরিয়ে কীভাবে অনুপ্রবেশ ঘটছে? বাংলাদেশে আসা নতুন রোহিঙ্গারা জানাচ্ছেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে এখনও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়াতে তারা রাতের বেলায় নৌকায় করে নাফ নদী পেরিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। জেসমিন জানাচ্ছেন, তার ভাষায়, গুরুতর আহত হওয়ায় ‘মিয়ানমারের সেনা সদস্যরাই তাকে পরিবারসহ একটি ছোট নৌকায় উঠিয়ে দেয়’। ভোর ৪টার দিকে তাদের নৌকা নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এজন্য নৌকার মাঝিকে দিতে হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। জেসমিনের মতোই সপ্তাহ দুয়েক আগে বাংলাদেশে ঢুকেছেন আছিয়া। ২০১৭ সালে তার বাবা-মা বাংলাদেশে এলেও আছিয়া তার স্বামীর সঙ্গে মিয়ানমারেই থেকে যান। কিন্তু এখন মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের তীব্রতা বাড়ায় জীবন নিয়ে মিয়ানমারে বেঁচে থাকার উপায় নেই। আছিয়ার স্বামী ওসমান গণি বলছেন, যুদ্ধের মধ্যে এখন মিয়ানমারে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু এর আগেরবার বাংলাদেশে আসিনি। সেখানে আমাদের বাড়িঘর আছে, জমি আছে, সম্পদ আছে। কিন্তু এখন যেভাবে দুই পক্ষ গোলাগুলি করছে, তারা দেখছে না যে কে সাধারণ মানুষ আর কে যোদ্ধা। আমাদের গ্রামে যখন বোমায় মানুষ মারা গেল, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে মিয়ানমারে আর থাকা যাবে না।’ কিন্তু তারা বাংলাদেশে ঢুকলেন কীভাবে? ওসমান গণি জানাচ্ছেন, প্রথমে পায়ে হেঁটে তারা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে এসেছেন। ‘আমাদের গ্রামে প্রথমে আরাকান আর্মি ড্রোন হামলা করে। তখন আমরা গ্রামের বেশ কিছু লোক দুই দিন পাশের একটা বনে লুকিয়ে ছিলাম। কোনও খাবার ছিল না। কিন্তু সেখানেও আরাকান আর্মি ড্রোন দিয়ে বোমা মেরেছে। পরে আমরা নদীতে গলা পানিতে ডুবে থেকে কোনো মতে জীবন বাঁচাই। আমরা সীমান্তের কাছে চলে আসি।’ ওসমান গণি বলছেন, নদী পারাপারের জন্য তাদের কাছে কোনো টাকা ছিল না। কিন্তু তারা বহু কষ্টে নদী পার হওয়ার জন্য একজন মাঝির সঙ্গে চুক্তি করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে হয় মাঝিকে। ‘আমরা যেন বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের কাছে ধরা না পড়ি সেজন্য মধ্যরাতে নৌকা ছাড়ে। আমাদের নামানো হয় শাহপরী দ্বীপের কাছে। পরে নৌকার মাঝি আমাদের স্থানীয় একটি গ্রামে একটা ঘরে নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। ক্যাম্পে আমাদের আত্মীয়ের কাছে ফোন দিলে তারা এসে চুক্তির বিশ হাজার টাকা তুলে দেয় মাঝিকে। এরপর তারা আমাদের ছেড়ে দেয়।’ ওসমান গণি জানান, মিয়ানমারে তারা বাবা-মা আছেন। কিন্তু তারা বেঁচে আছেন কি-না তিনি জানেন না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য হলো সরকারি স্বীকৃতি নেই, তাহলে কোথায় থাকছেন রোহিঙ্গারা? বাংলাদেশে গত দেড় মাসে নতুন করে যেসব রোহিঙ্গা ঢুকেছে, সরকারি হিসেবে তাদের সংখ্যা আট হাজারেরও বেশি। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। কিন্তু স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাস্তবে এ সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে দ্বিগুণ। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সরকার আশ্রয় না দেয়ায় তারা গোপনে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন এবং পূর্বপরিচিতদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। এতে আগে থেকেই গাদাগাদি অবস্থায় থাকা পরিবারগুলো নতুন করে চাপে পড়েছে। রুহুল আমিন নামে একজন জানাচ্ছেন, তার পাঁচ সদস্যের পরিবারে নতুন করে আসা আত্মীয় অবস্থান করছেন চারজন। কিন্তু এখন পুরো ৯ জনের খাবার চলছে, পাঁচজনের জন্য যে বরাদ্দ আসে সেখান থেকে। এভাবে কত দিন চলবে, তা নিয়ে সন্দিহান রুহুল আমিন। তার দাবি, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের যেন বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দেয়। তাহলে তারা নতুন ঘর এবং খাবারসহ অন্যান্য বরাদ্দ পাবে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে সরকার কী বলছে? বাংলাদেশে এবারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এমন একসময় ঘটছে, যখন দেশটিতে গণ-অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ থাকলেও শেখ হাসিনা সরকার সেটা অগ্রাহ্য করেছে। কিন্তু নতুন সরকার সেটা কতটা পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে গত সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাফ জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ নতুন করে আসা কোনও রোহিঙ্গা গ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, ‘গত সাত-আট বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী করেছে? এটার সমাধান তো ওই পারে (মিয়ানমারে)। তারা শুধু আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে গেছে, বার্মার ওপর তেমন কোনও চাপ সৃষ্টি হয়নি। এটা এভাবে চলতে পারে না। আমাদের পক্ষে আর কাউকে নেয়া সম্ভব নয়। এমনকি যারা এসেছে, আমরা তাদের নিবন্ধন করাব না।’ তিনি বলেন, নতুন রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করলে, সেটা আরও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশে উৎসাহিত করবে। ‘আমরা জানি যে, রোহিঙ্গারা সমস্যার কারণে এসেছে। কিন্তু এই সমস্যা শুধু আমাদের দেশের জন্য না, এটা গোটা পৃথিবীর জন্য সমস্যা। পৃথিবীকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে। যারা ঢুকে গেছে, আমরা তাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করব। কিন্তু আমরা তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেব না এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’ কিন্তু রোহিঙ্গারা বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ঢুকছে এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘কিছু দুর্বলতা’ থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘একটা বিরাট এলাকা দিয়ে সমুদ্র বা নদীপথে তারা ঢুকছে। অনুপ্রবেশের সংখ্যা এলার্মিং না। কিন্তু আমরা তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছি। এখানে কিছু দুর্বলতা তো অবশ্যই আছে। কারণ নদী এবং সাগর মিলিয়ে এলাকাটা তো বিশাল। আমরা তো আমাদের পুরো বর্ডার গার্ডকে সেখানে মোতায়েন করতে পারব না। আমাদের তো অন্যদিকেও সীমান্ত আছে।’

একদিকে বাংলাদেশ নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ইচ্ছুক নয়। অন্যদিকে নানামুখী চেষ্টার পরও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কোনো উদ্যোগ সফল হয়নি। এর মধ্যে মিয়ানমারের সংঘাতেরও সমাধান দেখা যাচ্ছে না। ফলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ না চাইলেও দেশটিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা থেমে থাকছে না। রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাত বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মধ্যে ছড়িযে পড়ছে। দিন যত বাড়ছে এই সংকট প্রকট হচ্ছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থির হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা যাবতীয় অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাদের বেপরোয়া চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কক্সজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ছে।

সাত বছর ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এখানে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে নানা ধরনের উগ্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জš§ নিয়েছে। স্বাভাবিক আয়-রোজগারের সুযোগ কম থাকায় তারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে প্রায়ই খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বাড়ছে। আর সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরসংলগ্ন দুর্গম লাল পাহাড়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় আরসার বাংলাদেশ কমান্ডার মো. শাহানুর ওরফে মাস্টার সলিম (৩৮) ও তার সহযোগী মো. রিয়াজকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট আরও তীব্র হয়েছে। তথ্য মতে জানা যায়, কেবল চলতি বছরের ১৪ মে পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাসে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আরসার হাতে ১৬ জন খুন হয়েছেন। আরসা ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। জানা যায়, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন তার দলবল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে কিছু সন্ত্রাসী ধরাও পড়েছে এবং বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এই নবী হোসেন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ) নামের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে তারা ব্যাপকভাবে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, খুনসহ আরও অনেক অপরাধের অভিযোগ আছে। প্রায় দুই বছর আগে নবী হোসেনকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। পার্বত্যাঞ্চলের দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে আরও কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। কিছুদিন আগে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি গোষ্ঠী বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলা সদরে থাকা তিনটি ব্যাংকে হামলা ও লুটতরাজ করে।

পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে। তাদের সঙ্গে দেশের কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরও সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়। তাই নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলে কক্সবাজারসহ পুরো পার্বত্যাঞ্চলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্থানীয়রা মনে করে, যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফেরত পাঠাতে জোর কূটনৈতিক উদ্যেগ চাই। তাদের প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরগুলোতে কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে। নারি ্ও শিশু পাচার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার করতে হবে। প্রত্যাবর্তনে কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করতে হবে। নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০