Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:53 am

অনুমতি ছয় লাখ ৩৪ হাজার এসেছে ৯২৭ মেট্রিক টন

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : গত ছয় মাসে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছিল। বিপরীতে সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৯২৭ টন। যদিও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি রয়েছে। আর ব্যাংকে এলসি সুবিধা স্বাভাবিক সময়ের মতো আছে। এরপরও বিদেশ থেকে সমুদ্রপথে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। ফলে দেশের বাজারের পেঁয়াজের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ স্টেশন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয় ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে মাত্র ৯২৭ টন। আর ২২-২৩ অর্থবছরের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট চার হাজার ৪৪৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।

গতকাল বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে পেঁয়াজের দামের চিত্র দেখা যায়, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আবার কোনো কোনো দোকানে ১০০ টাকায়ও বিক্রি করা হচ্ছে। আর খুচরা বাজারের প্রতিকেজি ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মাস আগেও দেশীয় পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ প্রায় ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিন্তু বিক্রেতাদের অভিযোগ, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে। চকবাজার এলাকার ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতি বছর পেঁয়াজ-সংক্রান্ত কোনো ইস্যু নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। চকবাজার বাজার এলাকার ক্রেতা মাইদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে ৯৫ টাকা ছিল পেঁয়াজের কেজি। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে কীভাবে ১১০ টাকা হলো? যেখানে একই স্টকের মাল রয়েছে, এমন দোকানের কথাই বলছি। এগুলো সিন্ডিকেটের কারণে হয়েছে। যেভাবে দাম বাড়ছে, পেঁয়াজ খাওয়াই বন্ধ করে দিতে পারলে ভালো হবে। কোনো একটা ইস্যু সামনে এনে সক্রিয় হয় পেঁয়াজ সিন্ডিকেট চক্র। ফলে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এতে সীমিত আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে।

অন্যদিকে খাতুনগঞ্জ বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে দেশে পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে। আর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে। কারণে ভারতের পেয়াঁজও কেজিপ্রতি ১০০ টাকা পড়বে। তাই আমদানি হচ্ছে না। ফলে দাম বাড়ছে। যদি বর্ষা কমে কিংবা কম দামে পেয়াঁজ আমদানি হয়, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ স্টেশনের উপ-পরিচালক শাহ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে উল্লেখ করার মতো পেঁয়াজ আমদানি হয় না। যদিও আমাদের ঢাকা অফিস থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র ইস্যু করা হচ্ছে। আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। কারণ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়।

চট্টগ্রামের পেঁয়াজ আমদানিকারক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমদানি কম হওয়ায় দেশের কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়েছে। এটা ভালো দিক। যদিও আমাদের পেঁয়াজের আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) অর্থাৎ আমদানি অনুমতি নেয়া আছে। ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কহার বেশি থাকায় কেজিপ্রতি ১০০ টাকার বেশি পড়বে খরচ। তাই আমদানি হচ্ছে না।

যদি ভারতের শুল্কহার কমানো হয়, তখন দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে। এতে পেঁয়াজের দাম কমবে, নয়তো আরও বাড়বে। উল্লেখ্য, দেশে বছরের পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ টন। এর বিপরীতে গত বছর দেশে উৎপাদিত হয়েছে ৩২ লাখ টন। আর পেঁয়াজ আমদানি হয় গড়ে আট-দশ লাখ টন।