Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:38 am

অনুমতি ছাড়াই সিইউএফএলে ৯ দিন বন্ধ ছিল উৎপাদন

প্রতিনিধি, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : আড়াই মাস বন্ধের পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে উৎপাদন শুরু হয় চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডে (সিইউএফএল)। রাষ্ট্রায়ত্ত এ কারখানাটিতে ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হওয়ার সাড়ে চার মাসের মাথায় ফের গত ৯ দিন উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল বলে জানা গেছে। বন্ধের পর গত রোববার দিবাগত রাত থেকে পুনরায় চালু উৎপাদন কার্যক্রম। তবে কী কারণে বন্ধ ছিল সে বিষয়ে সিইউএফএলের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলেনি। সিইউএফএলের একটি সূত্র বলছে, কারখানায় সার রাখার জায়গা না থাকায় সর্বশেষ গত ৯ জুলাই থেকে কারখানাটিতে উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) আইন বলছে, রাষ্ট্রীয় যেসব কারখানা রয়েছে তার মধ্যে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডে (সিইউএফএল) প্রথম সারির কারখানা। এটির উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হলে বিসিআইসি নির্দেশনা থাকতে হয়। একটি সূত্র বলছে, এমন কোন নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও কারখানার এমডির নির্দেশে সার রাখার জায়গা না থাকা এমন টুনকো অজুহাতে কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়।

উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরিয়া আর অ্যামুনিয়া দু’টোর সমন্বয়ে উৎপাদন হয়। এটি বন্ধের পর ফের উৎপাদন করতে গেলে কোটি কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়। কারখানার কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের মাঝে হঠাৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র জানায়, সিইউএফএলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৪৭০০০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করে। কারখানাটি এর মধ্যে বেশ কয়েকবার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়। সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুনরায় এ কারখানাটিতে ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয়েছিল। সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ জানায়, কারখানাটি সচল থাকলে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করা সম্ভব হয়। সর্বশেষ উৎপাদন হয়েছে ১০০ থেকে ১২শ মেট্রিক টন।

সিইউএফএল সিবিএ একটি সূত্র বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৬৫%, যা বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেয়া লক্ষ্য অর্জন হয়নি। যে কারণে উৎপাদন বন্ধ লক্ষ্য অর্জন না হওয়া ফের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯ দিন কারখানা বন্ধ থাকায় সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানান নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক সিবিএ নেতা।

এদিকে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ইউরিয়া সারের টন ৮০/৯০ হাজার টাকা তখন সিইউএফএল ১০০৬২৩.১০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন যা সরকারের কোটি কোটি টাকার সার আমদানিতে ভর্তুকি থেকে বাঁচাবে, যা ব্যয় খাতে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। এমন অবস্থায় ফের ৯ দিন বন্ধ থাকায় কারখানা কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে।

জানা যায়, গত রোববার দিবাগত রাত থেকে পুনরায় উৎপাদনে যায় কারখানাটি। বিসিআইসি নির্দেশনা ছাড়াই কারখানাটি যখন তখন উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

এদিকে সিউএফএলের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি। জিমএম এডমিন মইনুল হক ফোন রিসিভ করলেও তিনি মিটিং-এ আছি বলে ফোন কেটে দেন। পরে আর রিসিভ করেনি। অপর ইউরিয়া শাখা প্রধান গোলাম রাব্বানী ফোন রিসিভ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না বলে ফোন কেটে দেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে সিইউএফএলের এমডি আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।