অনুমোদনহীন এলইডি পণ্যে ঠকছেন ক্রেতারা

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে সাধারণ মানুষ ঝুঁকছে এলইডি প্রযুক্তির দিকে। তবে এলইডির নি¤œমানের পণ্যের কারণে প্রতিনিয়ত ঠকছেন ক্রেতারা। আমদানি করা এসব পণ্যে নেই মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের তদারকিও। ফলে প্রতারিত হলেও এক্ষেত্রে সাধারণ গ্রাহকরা কোথাও অভিযোগেরও সুযোগ পাচ্ছেন না। অপরদিকে বিএসটিআই বলছে, অভিযোগ পেলে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই নোয়াখালীতে ইজিবাইকে মাইক ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা এলইডি বাল্ব বিক্রি করছে। নানা আকর্ষণীয় অফার দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এসব এলইডি বাল্ব। কিন্তু এ বাল্ব কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। যদিও  ছয় মাসের গ্যারান্টি দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই এ সব এলইডি বাল্ব নষ্ট হলেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওই বিক্রেতা বা ডিলারকে। প্যাকেটে কিংবা এন্ট্রি কার্ডে কোনো ঠিকানা দেওয়া থাকে না। আর এভাবেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

প্রচলিত পণ্যের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য এলইডি। তাছাড়া এলইডি পণ্য টেকসইও বটে। একটি এলইডি বাতির স্থায়িত্ব থাকে ৫০ হাজার ঘণ্টারও বেশি, যা সাধারণ বাতির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি স্থায়িত্বশীল। আলোর শক্তি, মেয়াদ, তাপমাত্রা, পরিবেশের ওপর প্রভাব সব মিলিয়ে এলইডি এখন সবার পছন্দের প্রথমে। এলইডি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। তবে আমদানি করা এলইডি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কোনো ধরনের মান তদারকি ছাড়াই দেশে প্রবেশের সুযোগ থাকায় দেদারছে নি¤œমানের পণ্য প্রবেশ করছে বাজারে। আর সরল মনে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনে ঠকছেন।

জানা গেছে, নি¤œমানের এসব পণ্যের ৮০ শতাংশের অবস্থান জেলার চৌমুহনীতে। এখানেই নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০টির মতো ঘরোয়া অবৈধ কারখানা। ইজিবাইকে পাওয়ার এবং ডিজিটাল নাম ব্যবহার করে এলইডি বাল্ব বিক্রি করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজিবাইকে রাস্তায় স্থায়ীভাবে মাইক ব্যবহার করে বিক্রি হচ্ছে এসব মানহীন এলইডি বাল্ব। এছাড়া বাসার মধ্যে তৈরি হচ্ছে এসব মানহীন এলইডি বাল্ব। গাড়িতে মাইক ব্যবহার করে বিক্রয় করাকালে এসব এলইডি বাল্বের প্যাকেটে কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। কোনো ফোন নম্বরও নেই। অথচ দেওয়া হচ্ছে ছয় মাসের গ্যারান্টি। বাল্ব নষ্ট হলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এসব বিক্রেতাদের।

ইজিবাইকে এক এলইডি বাল্ব বিক্রয়কারী বলেন, আমার জানা মতে কোনো গাড়িতেই আমাদের কোনো অনুমতি নেই। তবে কীভাবে চলে এমন এক প্রশ্নের জবাবে এ বিক্রেতা বলেন, মালিক ভালোই জানেনÑআমাদের পুলিশে ধরে না।

একটি এলইডি বাল্ব বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, আমরা দোকানে যে সব এলইডি বাল্ব বিক্রি করি তার দাম বেশি। গ্যারান্টি দিলে একজন ক্রেতা এখানে এসে সেটা পরিবর্তন করে নিতে পারেন। কিন্তু যারা অটোতে করে রাস্তায় বিক্রি করছে, তারা কম দামে মানহীন এসব পণ্য বিক্রি করে। একদিকে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে, অন্যদিকে এলইডি লাইটের প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে।

সোনাপুরের ভুক্তভোগী এক ক্রেতা শিফিকা আক্তার বলেন, ১০/১৫ দিন আগে আমি একটি এলইডি বাল্ব কিনেছি। এখন নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু ছয় মাসের গ্যারান্টি দেওয়া সত্তে¡ও আমি তাদের গাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। যার কাছে যাই সে বলে এটা আমাদের না।

নোয়াখালীর সচেতন নাগরিক মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এলইডি উন্নত প্রযুক্তি। ভালো সেবা পাওয়ার জন্য ক্রেতারা বেশি দামে এলইডি পণ্য কেনেন। কিছুদিন না যেতেই এসব পণ্য নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। বিদেশি নি¤œমানের এলইডি পণ্যের কারণে দেশীয় শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টির নানা ফাঁদে ফেলা হচ্ছে ক্রেতাদের। জোরালো তদারকি না থাকলে এলইডি পণ্য থেকে ক্রেতাদের আস্থা উঠে যাবে। বিএসটিআইয়ের মান তদারকি বাড়ানো দরকার। না হলে মানহীন পণ্য কিনে ভোক্তাদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা বাড়বে।

এ বিষয়ে বিএসটিআই’র নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক দেলওয়ার হোসেন বলেন, বিএসটিআই অনুমতি ছাড়া এগুলো বাজারজাত করতে পারবে না। তবে আমরা কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০