Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 6:40 pm

অনুমোদনহীন প্রচারণা নয়

গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ফোরজি সিমে গ্রাহকদের বোকা বানাচ্ছে অপারেটরগুলো’ শিরোনামের খবরটি অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত কোনো সেলফোন অপারেটরকে দেশে ফোরজি (লং টার্ম এভুলিউশন বা এলটিই) সেবা পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া না হলেও একশ্রেণির অপারেটর ফোরজি অ্যাক্টিভেটেড সিম বিক্রি শুরু করেছে। অপচর্চাটি আপাতত রাজধানীকেন্দ্রিক বলে জানা যায়। তবে ঢাকায় ‘কাক্সিক্ষত সাড়া’ মিললে সেটি যে দ্রুতই অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়বে, তা বলার অবকাশ রাখে না। সরেজমিনে এ দৈনিকের প্রতিবেদক আরও দেখেছেন, এক্ষেত্রে গ্রাহক বুঝে ‘ফোরজি’ নামক সিম বিক্রি ও সে বাবদ টাকাপয়সা নেওয়া হচ্ছে।

প্রথম প্রশ্ন হলো, আমাদের থ্রিজি সেবার অভিজ্ঞতা কেমন? এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কারিগরি যুক্তি দিয়ে হয়তো ধরা যাবে না থ্রিজি সেবায় যথাযথ ইন্টারনেট গতি দিতে পারছে না অপারেটরগুলো। তবে নৈতিকতার মানদণ্ডে সেবাগুলোকে নির্দ্বিধায় গ্রাহকের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় বলেই মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, অপারেটররা এক্ষেত্রে অনেক সময় এমন ‘সূ² কারসাজি’ করেন যে তা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষেও সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে ফোরজি অ্যাক্টিভেটেড সিমের সংখ্যা যেহেতু এখনও সীমিত, তাই কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ‘ফোরজি সেবা’র নামে সংশ্লিষ্টরা গ্রাহকের হাতে কী তুলে দিচ্ছেন, সেটা খতিয়ে দেখা। এমনটি কিন্তু অসম্ভব নয় যে, বেশি ব্যান্ডউইথডের থ্রিজি সেবাকেই একশ্রেণির অপারেটর ফোরজি বলে চালাচ্ছে। তাহলে ঘটনাটি হয়ে পড়বে খোলামেলা প্রতারণা।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, ফোরজি অ্যাক্টিভেটেড সিম চালানোর মতো মোবাইল হ্যান্ডসেট কী পরিমাণ রয়েছে দেশে? এক্ষেত্রে জবাবটা সন্তোষজনক নয়। একাধিক বিশেষজ্ঞ এ দৈনিকের কাছে মত দিয়েছেন, দেশের সিংহভাগ মানুষের হাতে থ্রিজি সেবা গ্রহণের উপযোগী হ্যান্ডসেটই পৌঁছেনি এখনও। এলটিই সেবা চালানোর জন্য যে হ্যান্ডসেটের বিশেষ সক্ষমতা থাকতে হয়, সেটিও অনেকের অজানা। এ অবস্থায় সবার হাতে ফোরজি সিম গছানোর উদ্যোগ অপচেষ্টা বৈকি। ফলে নজরদারি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আর সেজন্য বিটিআরসি’কেই সক্রিয় দেখতে চাইবেন সবাই। দেশে এখনও ফোরজি সেবা প্রচলিত নয়; ফোরজি লাইসেন্স প্রদানের কথাবার্তা চলছে মাত্র। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোম্পানি চাইলে তাদের আকর্ষণীয় পণ্যের আগাম প্রচার চালাতে পারে বটে, কিন্তু তা হতে হবে নীতিমালার আওতায়। এখন পরীক্ষামূলকভাবে যদি সিমগুলো ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রেও গাইডলাইন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো জোর দিয়ে গাইডলাইনের প্রস্তাব তুলতেন না, যদি সেলফোন অপারেটরদের কার্যকৌশল বিষয়ে নিঃসন্দেহ থাকতেন তারা। তবে অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছেন, প্রযুক্তিনির্ভর এ জরুরি সেবা খাতটিতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার শেষ নেই। একেবারে শুরু থেকে চলছে এটা। ঘটনার শুরু কলরেট দিয়ে। পরে টুজি নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ ফুরোতে না ফুরোতেই থ্রিজির লাইসেন্স দেওয়া হলো তাদের। আবার থ্রিজি নিয়ে অভিযোগ বিস্তর; তারপরও ফোরজি লাইসেন্স হস্তগত করতে চাইছে কোম্পানিগুলো। চাওয়াটা অসঙ্গত নয় বটে। ফোরজি সেবা চালুর চাপ গ্রাহকের তরফ থেকেও ছিল। তবে খেয়াল রাখা চাই, এরই মধ্যে কার্যত দেশের বৃহত্তম আইএসপি’তে পরিণত হয়েছে সেলফোন অপারেটরগুলো। ভালো হতো বিটিটিবি বা স্থানীয় আইএসপিগুলো তাদের শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে দাঁড়াতে পারলে। সে সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে প্রতীয়মান। সুতরাং ফোরজি নীতিমালা আরও গ্রাহকবান্ধব হওয়া উচিত, এটা বক্তব্য নয়Ñদাবি। আর সেজন্যই অনুমোদন লাভের আগে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ‘ফোরজি অ্যাক্টিভেটেড সিম’-এর বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বাঞ্ছনীয়।