অনুমোদনের অপেক্ষায় ‘জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন নীতিমালা’

নাজমুল হুসাইনঃ দেশে দুধ উৎপাদন বা বাজারজাতকরণে কোনো নীতিমালা নেই। এছাড়াও দুগ্ধ খাতের উন্নয়নে গবেষণা, সম্প্রসারণ, উদ্যোক্তা তৈরিতেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে এখন পর্যন্ত দুগ্ধশিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতি কাক্সিক্ষত হয়নি। এ অবস্থায় দেশে দুগ্ধ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন নীতিমালা’ প্রণয়ন করছে সরকার। ইতোমধ্যেই প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার একটি খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার খসড়ায় দুগ্ধশিল্পের সার্বিক উন্নয়নে একটি ‘জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন এবং এ বোর্ড গঠনের আলাদা একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য একটি ‘জাতীয় দুগ্ধ গবেষণা কেন্দ্র’ স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে খসড়ায়।
নীতিমালা বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, সম্পৃক্ত বিভিন্ন মহলের মতামতের ভিত্তিতে একটি খসড়া তৈরি করে গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ নীতিমালায় একটি জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ড ও একটি জাতীয় দুগ্ধ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে যা খুবই দরকারি।’
জানা গেছে, দেশে উন্নত জাতের গাভী, মানসম্পন্ন গোখাদ্য, যথাযথ মূল্যে খাদ্য ও প্রতিষেধকের প্রচুর অভাব রয়েছে। এসব বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে নীতিমালায়। এছাড়া দুগ্ধখামারিদের বীমার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ ও তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিহীন এবং প্রান্তিক চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণের কথা বলা
হয়েছে নীতিমালায়।
বাণিজ্যিকভাবে দেশে উৎপাদিত দুধ বাজারজাতকরণে নানা সমস্যা রয়েছে। খামারিরা দুধের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া দেশে দুগ্ধ সংরক্ষণ ও সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নীতিমালায়। বাংলাদেশে অবস্থানরত সরকারি-বেসরকারি অথবা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসহ যারা দুগ্ধ খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, সবাই এ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ নীতিমালার মাধ্যমে দুগ্ধ উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, সিমেন বা ভ্রƒণ আমদানি, দুগ্ধ প্লান্টের যন্ত্রপাতি আমদানি, গবাদিপশুর খাদ্য-ওষুধ-টিকা উৎপাদন ও আমদানি, গুঁড়োদুধ উৎপাদন ও আমদানি, দুগ্ধশিল্পের সঙ্গে জড়িত পণ্য উৎপাদন ও আমদানি সরাসরি তদারকি করা হবে।
দুগ্ধনীতির খসড়া অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে (২০১৫-১৬ অর্থবছর) বছরে দুধের মোট চাহিদা ১৪৬ দশমিক ৯১ লাখ টন। এর বিপরীতে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ৭২ দশমিক ৭৫ লাখ টন। ফলে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি ৫০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এতে তরল দুধের ঘাটতি পূরণে ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর প্রায় এক হাজার ৮৮০ কোটি টাকার গুঁড়োদুধ বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই আমদানি করা গুঁড়োদুধ নি¤œমানের হয়ে থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে নীতিমালা সার্বিকভাবে কাজ করবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, দুগ্ধশিল্পে ব্যবহƒত যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে কৃষি সেক্টরের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। দুগ্ধশিল্পের যন্ত্রপাতি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে উৎপাদন করতে চায়, তবে সে প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। বাণিজ্যিক খামারিদের সরকারি ও বেসরকারি বিমা কোম্পানির মাধ্যমে বিমা সুবিধা দিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া দুগ্ধশিল্পে নিয়োজিত পুঁজির ওপর কৃষির মতো কর সুযোগ-সুবিধা প্রদান, দুগ্ধশিল্পকে প্রাণিজ কৃষিখাত হিসেবে সব ক্ষেত্রে শস্য খাতের মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অপরদিকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত মাঝারি ও বৃহদাকার খামারগুলোয় সার্বিকভাবে তদারকির কথা বলা হয়েছে এ নীতিমালায়। এতে বলা হয়েছেÑখামার প্রস্তুতের ক্ষেত্রে তা জনবসতি, রেললাইন, মহাসড়ক থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরে স্থাপন করতে হবে; বাণিজ্যিক খামারগুলোকে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের রেজিস্ট্রেশনের অধীনে রাখা হবে; খামারের নির্ধারিত স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রাখা; বিদেশ থেকে তরল ও গুঁড়োদুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে।
এতে দুগ্ধক্ষেত্রকে জাতীয় গুরুত্ব দিয়ে ‘জরুরি সেক্টর’ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এতে আরও বলা হয়, সমবায়ভিত্তিক দুধ উৎপাদন কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণ, এ ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের তিন স্তরবিশিষ্ট সমবায় মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।
জানা গেছে, দুগ্ধ উন্নয়ন নীতিমালার খসড়া তৈরিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা) ও নারী ডেইরি উদ্যোক্তা উন্নয়ন জাতীয় ফোরামসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০