শেখ আবু তালেব: অনেকটা নীরবেই হাতবদল হলো অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় থাকা প্রস্তাবিত ‘পিপলস ব্যাংক লিমিটেড’। ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার প্রাথমিক অনুমোদন লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পেয়েছিল ব্যাংকটি। এ সময় থাকা ২৩ পরিচালকের ২২ জনের শেয়ার হাতবদল হয়েছে। নতুন করে আরও ২২ পরিচালক যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আক্তার।
আগের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র আবুল কাশেমই থাকছেন। নতুন করে ২২ জন যুক্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
এদিকে প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের লেটার অব ইনটেন্টের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের জন্য সময় দেয়া হয়েছিল গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। পরে লেটার অব ইনটেন্টের মেয়াদ আরও তিন মাস বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছিল প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।
এতে আগের দেয়া এলওআই বাতিল হয়ে গেছে। প্রস্তাবিত ব্যাংকটিকে আবার এলওআই নিতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রস্তাবিত ব্যাংকটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেনি, নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করার আবেদনও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গ্রহণ করেনি।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের লেটার অব ইনটেন্টের শর্ত পূরণের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আবেদনটি গ্রহণ করা হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানিয়েছে, আগের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র একজন আবুল কাশেমই রয়েছেন। নতুন করে ২২ উদ্যোক্তার নাম দিয়ে আবেদন করেছে প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক। তারাই প্রয়োজনীয় মূলধন জোগান দেবে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আক্তার। নতুন যোগ হওয়া উদ্যোক্তাদের বিষয়ে কিছুই জানে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। তার ওপর একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ও পিপলস ব্যাংককে লেটার অব ইনটেন্ট দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে দুটি ব্যাংক চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ সভপাতি মো. আবুল কাশেমের উদ্যোগে লেটার অব ইনটেন্ট পাওয়া পিপলস ব্যাংক এখনও প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ব্যাংকের অনুমোদন পেতে হলে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়। নতুন ব্যাংকের অনুমোদন পেতে পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে সম্প্রতি।
প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংককেও সেই শর্ত পূরণের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়েও প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেনি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, আবেদনের সময়ে উদ্যোক্তাদের প্রথম দিকে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেরই বৈধ আয়ের উৎস দেখাতে পারেননি। আবার কয়েকজনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও ছিল। এভাবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে কয়েক দফায়। এমনকি প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকেও বলা হয়েছে, তার প্রদর্শিত পুরো অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৈধভাবে অনুমোদন নিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে হবে। আবুল কশেমের প্রদর্শন করা অর্থের মধ্যে মাত্র ৫৬ লাখ টাকার উৎস বৈধভাবে দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে মোট শেয়ারের মধ্যে ন্যূনতম দুই শতাংশ ধারণ করতে হয়। এর ফলে পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হতে ইচ্ছুক সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আক্তারকেও ১০ কোটি করে টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, তারা নতুন ব্যাংকের পরিচালক হতে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে ইচ্ছুক। বিষয়টি জানিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদনও করেছেন। সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে দেখাও করেছেন সাকিব আল হাসান।
এদিকে গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে মোট ২৭টি এজেন্ডা নির্ধারিত ছিল। এর বাইরে বিবিধ তালিকায় আরও কিছু যুক্ত ছিল। এসবের মধ্যে ছিল ব্যাংক কর্মকর্তাদের গৃহ নির্মাণ ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ব্যাংকে আউট সোর্সিংসের মাধ্যমে নিয়োজিত ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মীদের করোনাকালে যাতায়াত ভাতা প্রদানের অনুমোদন ও চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জরিমানা মওকুফের আবেদন। এর মধ্যে তানাকা গ্রুপের সিআইবি তথ্য গোপন করার অভিযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংককে জরিমানা করার মওকুফ বিষয়টি। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদ সেই আবেদন পুনর্বিবেচনা করেনি।
এছাড়া ২০১৫ সালে বৃহৎ অঙ্কের ঋণ এককালীন বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফসিল করার সুযোগ নিয়েছিল ১৪টি শিল্পগ্রুপ। সেই ঋণগুলো আবার খেলাপি হয়ে গেছে। তারা আবারও পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করেছে। বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।