Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:24 am

অনুমোদনের চেয়ে তিনগুণ বেশি পাহাড় কেটেছে সিডিএ!

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম:পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে ‘ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক’ (ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক) বাস্তবায়নে অনুমোদনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিরুদ্ধে। এতে পুরো এলাকার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের শর্ত ভঙ্গ করে অনুমোদনের চেয়ে বেশি পাহাড় কাটায় আবারও শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে সিডিএকে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বলছে, ‘অনুমোদনের চেয়ে তিনগুণ বেশি পাহাড় কেটেছে সিডিএ।’ অন্যদিকে সিডিএ বলছে, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে, আরও কাটা হতে পারে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহমদ গত শনিবার সিডিএ’র নির্মাণাধীন ‘ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক’ প্রকল্পের বায়েজিদ অংশে কর্তনকৃত পাহাড় পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনুমোদনের বাইরে পাহাড় কাটা হয়েছে কি না, তা দেখে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়কে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

জানা গেছে, এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার সকালে শুনানি ডেকেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে উপস্থিত থাকার জন্য সিডিএকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। শুনানিতে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মানেনি সিডিএ। ‘হিল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ও কার্যকর করেনি তারা। সিডিএ কী করতে চায়, তাদের পরিকল্পনা কী, তাও জানা দরকার।

তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর গবেষণাগারের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুউল্লা নূরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় তিনটি মৌজায় আড়াই লাখ ঘনমিটার মাটি কাটার অনুমোদন দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু সরেজমিন তদন্তে দেখা যায়, অনুমোদনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি মাটি কেটেছে সিডিএ।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘অনুমোদনের বাইরে পাহাড় কেটেছে সিডিএ। আজ ঢাকায় শুনানি হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে।’ কী ধরনের শাস্তি পেতে পারে সিডিএÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জরিমানাও হতে পারে, আবার মামলাও হতে পারে।’

জানতে চাইলে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বলেন, ‘তদন্ত করে কি পাওয়া গেছে, তা আমরা জানি না। পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের জানায়নি। শুনানিতে আমরা জবাব দেব।’

এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘ওরা (পরিবেশ অধিদপ্তর) প্রকৌশলী কি না? ওরা কোন মেথডে মেপেছে, আমাদের হিসাব দিতে হবে। তিনগুণ মাটি বেশি কাটা হয়েছে, ওরা হিসাবটা কীভাবে পেল? অফিসিয়ালি চিঠি দিতে বলুন। তারপর আমি তদন্ত কমিটি করব।’

পরক্ষণে তিনি আবার বলেন, ‘রাস্তা করতে হলে সাইড অফিস লাগবে, একটি স্টেক ইয়ার্ড লাগবে, বেস ক্যাম্প লাগবে। পাহাড়ের ওপর কি করব স্টেক ইয়ার্ড? গাড়ি নামবে কীভাবে? আমাকে তো রাস্তার মাঝখানে অফিস, স্টেক ইয়ার্ড করতে হবে, মিক্সার মেশিন বসাতে হবে। এগুলো বসাবে কোথায়? পাহাড় কাটতে হবে না? রাস্তার জন্য অনুমোদন আছে আড়াই লাখ ঘনমিটার, বাকি কাজের জন্য পাহাড় সমান করতে হবে না? আড়াই লাখ ঘনমিটার পাহাড় কাটবে সিডিএ। ঠিকাদারের হিসাবে আরও বেশি হবে। ঠিকাদার বেস ক্যাম্প, স্টেক ইয়ার্ড কোথায় করবে?’

জানা যায়, প্রকল্পের ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই পাহাড় কাটার অপরাধে শুনানির মাধ্যমে গত বছরের জানুয়ারিতে সিডিএকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপরোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর একনেকে পাস হয়। প্রশাসনিক অনুমোদন হয় ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পটি প্রথম নেওয়া হয় ১৯৯৭ সালে। তখনকার ৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন ৩২০ কোটি তিন লাখ ৭৮ হাজার টাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে।

প্রকল্পের ঠিকাদারি সংস্থা স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রকল্পটির বর্তমান মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এর অধীনে ছয় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস রোড হিসেবে বায়েজিদ বোস্তামী হতে ঢাকা ট্রাংক রোডের সংযোগ স্থাপন হবে।

প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বলেন, ‘প্রকল্পটি প্রথমে দুই লেনের ছিল, পরে চার লেনের করা হয়েছে। বর্তমানে এর ৮৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ করে উদ্বোধন করা হবে।’