সোহেল রহমান : প্রকল্প অনুমোদন ও ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার দুই বছর পর বাতিল হচ্ছে কুড়িগ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িতব্য ‘ধরলা ৩০ মেগাওয়াট সোলার পার্ক’ প্রকল্প। প্রকল্পের সুরক্ষায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ধরলা নদীর তীরে বাঁধ দেওয়ার প্রস্তাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সম্মত না হওয়ায় এবং প্রকল্পের সাইট স্থানান্তরের সুযোগ না থাকায় এটি বাতিল করা হচ্ছে। প্রকল্পটির অনুকূলে ইস্যুকৃত ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বাতিলে আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠেয় ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’-তে প্রস্তাব আনছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীরে বেসরকারি খাতে বিল্ড-ওন-অপারেট (বিওও) ভিত্তিতে একটি সোলার পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং যাচাই-বাছাইপূর্বক ‘ইটার্ন-সিসিসিই-হেরিয়ন কনসোর্টিয়াম’ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রস্তাবটি ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ‘লেটার অব ইন্টেন্ট’ ইস্যু করা হয়।
সূত্র জানায়, এর আগে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীরে সোলার পার্ক স্থাপনের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাউবি প্রতিনিধিসহ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকাটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উপযোগী বলে মত দেয় কমিটি।
সূত্র জানায়, এদিকে ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ ইস্যুর পর স্পন্সর কোম্পানি তথা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মাধবরাম মৌজায় প্রায় ১৮ একর ব্যক্তিমালিকানা জমি অধিগ্রহণ করে এবং ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট স্পন্সর কোম্পানির অনুকূলে ৯৮ দশমিক ২৭ একর খাসজমি হস্তান্তর প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। এ ধারাবাহিকতায় প্রকল্পের সুরক্ষায় ধরলা নদীর তীরে বাঁধ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানায় স্পন্সর কোম্পানি। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে স্পন্সর কোম্পানির প্রস্তাবে বিদ্যুৎ বিভাগ সম্মতি দিলেও এতে আপত্তি তুলেছে পাউবি।
এ বিষয়ে পাউবির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সাইট বন্যা সমতলে হওয়ায় সেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হলে ধরলা নদীর জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত হবে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে বাস্তবায়নের সুপারিশ করে পাউবি।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কুড়িগ্রামের অন্যত্র জমি না পাওয়ায় স্পন্সর কোম্পানির পক্ষ থেকে পঞ্চগড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি একটি সলিসিটেড প্রস্তাব হওয়ায় ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮’ অনুযায়ী, এ প্রকল্পের সাইট পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবেÑ এটি বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের স্থান পরিবর্তন হলে প্রকল্প ব্যয় ও ট্যারিফ হার বাড়বে। এসব কারণে প্রকল্পটি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
Add Comment