Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:16 pm

অনুমোদন পাচ্ছে বিআরটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ইউলুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর যানজট নিরসনে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে নির্মাণ করা হবে ‘ইউ’ আকৃতির বিশেষ ব্যবস্থা বা ‘ইউলুপ’। একই রুটে নির্মাণ করা হবে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। এতে প্রকল্প দুটির মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার শঙ্কা রয়েছে। কারিগরি কিছু ত্রুটিও রয়েছে এসব ইউলুপে। এজন্য প্রকল্পটিতে আপত্তি তুলেছিল ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এরপরও ইউ-লুপ প্রকল্প অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ইউ-লুপ প্রকল্পটি আজ উত্থাপন করা হবে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজধানীর যানজট ২৫ শতাংশ কমবে বলে প্রত্যাশা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

তথ্যমতে, আবদুল্লাহপুর থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ২২টি ইন্টারসেকশন (মোড়) বন্ধ করে ১২টি ইউলুপ নির্মাণ করতে চায় উত্তর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ছয়টি ছোট গাড়ির জন্য ‘বি-টাইপ’ ও ছয়টি সব ধরনের গাড়ির জন্য ‘এ-টাইপ’ ইউলুপ রয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২৩ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) শর্তসাপেক্ষে গত বছর ২৫ এপ্রিল প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। এক্ষেত্রে ডিটিসিএ’র ছাড়পত্র নিতে বলা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউলুপ প্রকল্পটির ছাড়পত্র নিতে ডিটিসিএতে আবেদন করে ডিএনসিসি। গত বছর ১২ মে এ-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউ-লুপের বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে বলা হয়, রাজধানীর যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে এটি সংশোধন করা হচ্ছে। তবে এসটিপি বা এর সংশোধনী কোথাও ইউলুপ নির্মাণ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং এ রুটে নির্মিতব্য বিআরটির সঙ্গে ইউলুপ সাংঘর্ষিক। তাই বিআরটি নির্মাণ শুরু করা হলে ইউ-লুপগুলো ভাঙতে হবে। তাই এ প্রকল্পটিতে অর্থেরও অপচয় করবে।

জয়দেবপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত দুই ভাগে বিআরটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে জয়দেবপুর-বিমানবন্দর (বিআরটি উত্তর) অংশ নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। চলতি বছর এর কাজ শুরু করা হবে। এ অংশে প্রস্তাবিত ছয়টি ইউ-লুপের চারটি বিআরটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই অবস্থা কেরানীগঞ্জ-বিমানবন্দর (বিআরটি দক্ষিণ) অংশেও। এ অংশেও নির্মিতব্য ছয়টি ইউ-লুপের চারটি বিআরটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এজন্য উভয় অংশের প্রকল্প পরিচালক ইউ-লুপ নির্মাণে আপত্তি তোলেন।

বৈঠকে আরও বলা হয়, শহর এলাকায় বিশেষত যেখানে প্রচুর গাড়ি চলাচল করে সেখানে কৌশলগত কারণে ইউ-লুপ নির্মাণ করা উচিত নয়। কারণ অল্প জায়গায় ইউ-লুপ নির্মাণের ফলে গাড়ি ঘুরতে গিয়ে গতি কমে যাবে। এতে টার্ন নিতে সময় বেশি লাগবে ফলে লুপের প্রান্তে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হবে। এছাড়া বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দৃশ্যত যানজট ততটা হয় না। বরং ইউ-লুপ নির্মাণ হলে চার লেনের সড়কটি দুই লেনে পরিণত হবে। এতে সোজা চলাচলেও যানজট তৈরি হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউ-লুপ নির্মাণের প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আগে কোনো ধরনের ট্রাফিক সার্ভে করা হয়নি। ফলে এর সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তাই প্রথম ধাপে সাতরাস্তা থেকে বনানী পর্যন্ত ইউ-লুপ নির্মাণের প্রস্তাব করা যেতে পারে। এর সুফল দেখে দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ইউ-লুপের প্রস্তাব করা হয়। তবে ইউ-লুপের নকশাকে বিআরটি প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে সংশোধনের সুপারিশ করা হয়।

পরে প্রকল্পটি কিছুটা সংশোধন করে ১১টি ইউ-লুপ নির্মাণের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে ডিএনসিসি। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তবে এতে অনুমোদন দেয়নি ডিটিসিএ। ফলে বিভিন্ন ধরনের লবিং শুরু করে সংস্থাটি। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চাপও দেওয়া হয় এটি বাস্তবায়ন। পরে বাধ্য হয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন করে ডিটিসিএ।

ডিটিসিএর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ইউ-লুপের নকশা বিআরটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে এটি নির্মাণে আপত্তি তোলা হয়। এতে বিআরটি নির্মাণ শুরুর পর ইউ-লুপগুলো ভাঙতে হবে। এছাড়া বিআরটির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ সাতটি মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এতে বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত যানজট এমনিতেই কমে যাবে। চলতি বছরই এর কাজ শুরু হবে। তাই ইউ-লুপ প্রকল্পের কোনো প্রয়োজনই ছিল না।

এদিকে ইউ-লুপের জন্য মহাখালীতে প্রস্তাবিত জমি দিতেও অস্বীকৃতি জানায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের ঢাকা সার্কেল। কারণ হিসেবে বলা হয়, মহাখালী বাস টার্মিনালের বিপরীতে সওজের জমি ব্যবহƒত হলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের পুনর্বাসন করা দরকার। এছাড়া ওই স্থানটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাসাবাড়ি নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, বিআরটির সঙ্গে ইউ-লুপের সাংঘর্ষিক অবস্থা সংশোধন করে নতুন নকশা করা হয়েছে। এতে সাতরাস্তা থেকে হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১২টির পরিবর্তে ১১টি ইউ-লুপ নির্মাণের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর ডিটিসিএর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকায় যানজট ২৫ শতাংশ কমবে।