Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:36 pm

অনুমোদন পেল ‘ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক: রপ্তানিকে উৎসাহ আর ব্যবসার উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ড লাইসেন্স দেয় সরকার। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য তৈরি না করে সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। অনেক প্রতিষ্ঠান শুল্ককর ফাঁকি দিতে পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু সে অর্থ দেশে আসে না। বন্ডের অপব্যবহার রোধ আর সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকে দুই ভাগে (ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেট) ভাগ করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে জনবল, যানবাহন ও অফিস ব্যবস্থাপনা সামগ্রীতে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়, যার কার্যক্রম করতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার বরাবর এ চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ১০ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আহসান হাবীবের সই করা এই চিঠি দেয়া হয়।

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ চিঠির ফলে এনবিআর এখন বন্ড দুই ভাগ করার গেজেট প্রকাশ করবে। গেজেটে কোন কোন এরিয়া কোন কমিশনারেটের অধীনে থাকবে, তা উল্লেখ করা হবে। এনবিআর চাইলে জুলাই থেকে নতুন কমিশনারেট যাত্রা শুরু করতে পারবে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্ডকে দুই ভাগ করার ফলে বেশি সুফল পাবেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিষ্ঠান নিয়মিত মনিটরিং আর অডিট করা গেলে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া বন্ডের অপব্যবহার রোধে বন্ড অটোমেশন করা হচ্ছে। আর বন্ডকে দুই ভাগ করার এনবিআরের নেয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, এনবিআরের অধীনে ‘ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট’-এর জন্য ২২০টি পদ (ক্যাডার পদ স্থায়ীভাবে এবং ক্যাডার-বহির্ভ‚ত পদ অস্থায়ীভাবে) রাজস্ব খাতে সৃজন এবং ১৭টি যানবাহন ও অন্যান্য অফিস সরঞ্জাম সাংগঠনিক কাঠামোভুক্তকরণে সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হলো। যানবাহনের মধ্যে পাঁচটি কার (একজন কমিশনার, দুজন অতিরিক্ত কমিশনার ও দুজন যুগ্ম কমিশনার ব্যবহার করবেন), দুটি মাইক্রোবাস (কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য) ও ১০টি মোটরসাইকেল রয়েছে।

অনুমোদিত অফিস সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছেÑএয়ার কন্ডিশনার, প্লেইন পেপার কপিয়ার, কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার, ইউপিএস, টেলিফোন, পিএবিএক্স, ফ্যাক্স মেশিন, পিএ সিস্টেম, ওয়াকিটকি, জেনারেটর, ডিজিটাল ক্যামেরা, মেটাল ডিটেক্টর ও বেজ স্টেশন।

অনুমোদিত জনবলের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১২ আগস্ট ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট স্থাপনে সৃষ্টি করা পদের বেতন স্কেল নির্ধারণ করে পদের অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহর সই করা আদেশে বলা হয়, ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট স্থাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বরের চিঠি এবং চলতি বছরের ২২ জুন ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অনুমোদনে এনবিআরের আওতাধীন ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট স্থাপনের জন্য রাজস্ব খাতে ২২০টি পদের অনুমোদন দেয়া হয়। সে অনুযায়ী, শর্ত সাপেক্ষে অর্থ বিভাগ ২২০টি পদের বিপরীতে বেতনগ্রেড নির্ধারণ করে দেয়।

২২০ জনের মধ্যে একজন কমিশনার, দুজন অতিরিক্ত কমিশনার, দুজন যুগ্ম কমিশনার, তিনজন উপ-কমিশনার, সাতজন সহকারী কমিশনার, একজন সহকারী প্রোগ্রামার, ১৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ১১০ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, তিনজন কম্পিউটার অপারেটর, তিনজন অফিস সুপারিনটেনডেন্ট, দুজন প্রধান সহকারী, একজন সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, ১১ জন উচ্চমান সহকারী, একজন সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, আটজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, একজন ক্যাশিয়ার, আটজন সাব ইন্সপেক্টর, সাতজন ড্রাইভার, ২৬ জন সিপাই ও আটজন অফিস সহায়কের পদ রয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালের ১ নভেম্বর বন্ড কমিশনারেট গঠন করা হয়। শুরুতে শুধু ঢাকায়ই বন্ডের অফিস ছিল। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতেই এ দুটি বন্ড কমিশনারেট গঠিত হয়। এখন কমিশনারেট দুটিতে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বন্ড লাইসেন্স, বার্ষিক অডিট, আমদানি প্রাপ্যতা ও ইউপি ইস্যু করা হয়। এর বাইরে বিদেশি ক‚টনীতিকদের জন্য পাসবই ইস্যু ও ডিপ্লোমেটিক বন্ডের অডিট এবং সুপারভাইজ্ড বন্ডের কার্যক্রম মনিটরিং করা হয়।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের হিসাব অনুযায়ী, এ কমিশনারেটের আওতাধীন মোট বন্ড লাইসেন্সের সংখ্যা ছয় হাজার ৬২৬টি। এর মধ্যে সচল রয়েছে তিন হাজার ১৩৯টি। অন্যদিকে সচল নেই তিন হাজার ৪৮৭টি।