Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:55 am

অনেক কোম্পানি বাজারে আসে অর্থ বানানোর জন্য

দেশের পুঁজিবাজার ওঠানামার হার অনেক বেশি এবং বেশিরভাগ সময়ে বাজার পরিস্থিতি খারাপ থাকে। কোনো কারণ ছাড়াই বাজার হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়, আবার কমেও যায়। এসব কারণে জনগণের আস্থা আরও কমতে থাকে। গত কয়েক মাসে বাজারে খারাপ শেয়ারের দর ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। কিছু শেয়ারের দর তো দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে দু-তিনগুণও বেড়ে গেছে, যা সম্পূর্ণই অযৌক্তিক। অথচ ভালো শেয়ারের দর বাড়ছে না। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘমেয়াদে টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ব্যবসা করে বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দেবে, সে অনুযায়ী বাজার তৈরি করতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাজারের যে অবস্থা তাতে মনে হয় অনেক কোম্পানিই বাজারে আসে অর্থ তোলার জন্য নয়, বানানোর জন্য। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বাজারে বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমে গেছে। ২০১০ সালে বিও অ্যাকাউন্টের পরিমাণ ৩২ লাখের মতো ছিল। আর আট বছর পরে এসে তা ২৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। কারণ গত আট বছরে দেশের অর্থনীতির সব সূচক তিনগুণের মতো বেড়েছে। বাজারে অনেক নতুন কোম্পানিও এসেছে, কিন্তু সেদিক বিবেচনায় বাজারে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়েনি। বরং উল্টো অনেক কমে গেছে। এর কারণ পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের অভাব। পাশাপাশি ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের প্রভাব এখনও বাজারে বিদ্যমান। ২০১০ সালের পর বাজারের প্রতি মানুষের আস্থার অভাব এখনও রয়ে গেছে। পৃথিবীর সব পুঁজিবাজারই ওঠানামা করে, কিন্তু বছর শেষে তা ওপরের দিকেই থাকে। অথচ দেশের পুঁজিবাজারে ওঠানামার হার অনেক বেশি এবং বছর শেষে বাজার পরিস্থিতি খারাপই থাকে। কোনো কারণ ছাড়াই বাজার হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়, আবার কমেও যায়। গত কয়েক মাসে বাজারে খারাপ শেয়ারের দর ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। কিছু শেয়ারের দর তো দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে দু-তিনগুণও বেড়ে গেছে, যা সম্পূর্ণই অযৌক্তিক। অথচ ভালো শেয়ারের দর তো বাড়ছে না, উল্টো পতন হচ্ছে। দেশের মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চায়, কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো হয়তো বাজারকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘমেয়াদে টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ব্যবসা করে বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দেবে সে অনুযায়ী বাজার তৈরি করতে পারছে না তারা। বাজারের যে অবস্থা তাতে আমার মনে হয় অনেক কোম্পানিই বাজারে আসে অর্থ তোলার জন্য নয়, বানানোর জন্য।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা সমাধানে ডিএসই এবং সিএসইর ভূমিকা ও স্বচ্ছতায় অনেক ঘাটতি আছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান ডিমিউচুয়ালইজেশন হওয়ার দীর্ঘদিন পরও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের প্রভাব রয়েই গেছে। তবে আশা করছি, কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীন বাজারে এলে বিষয়টি ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের পাশের দেশ ভারতের পুঁজিবাজারের সূচক বর্তমানে তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাত্রায় রয়েছে। তাদের সূচক এখন ৩২ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে গেছে। ডাউ জোনসেরও ২৫ হাজার পয়েন্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ কিন্তু শেয়ারদর বাড়া বা কমা তদারকি করা নয়, বরং কোনো শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে কি না তা দেখা। ২০১০ সালের পর প্রায় আট বছর পার হয়ে গেছে, তারপরও কি আমরা কারসাজি প্রমাণ করে কাউকে সাজা দিতে পেরেছি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য শীর্ষ ১০০টি কোম্পানি রেখে যদি বাকিগুলোকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দিয়ে দেওয়া যেত তাহলে দুটো বাজারই ভালো চলত বলে আমার ধারণা।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম